প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবারও বাড়ছে সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশেও সেই বাতাস আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।রবিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীতে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সঠিক পুষ্টিতে সুস্থ জীবন’। গতকাল শনিবার (২৩ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বলেন, ‘বর্তমানে সংক্রমণ নেই বললেই চলে। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে
তাতে সংক্রমণ ফের বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ভারতে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে অনেকেই যাতায়াত
করছেন।’ দেশে ফেরার পর তাদের নজরে রাখতে হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশের প্রায়
১৩ কোটি মানুষ এখন টিকার আওতায় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও এত টিকা
দিতে পারেনি। এখনও যারা টিকা নেয়নি, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই নিচ্ছেন না।’
গত ১০ বছরের
স্বাস্থ্য বিভাগের অভূত উন্নতি হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যেতে হলে মানুষকে সুস্থ
থাকতে হবে। এ জন্য পুষ্টি অপরিহার্য। আমাদের দেশে পুষ্টি সেবার অনেক উন্নতি হয়েছে।
প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা
পৌঁছে দিয়েছে সরকার। সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টি নিয়ে সচেতন করা হয়। অতিরিক্ত
তেল ও লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, শাক-সবজি ও ফলমূল খেতে হবে।’
তিনি বলেন,
আমরা কী খাচ্ছি সেটা দেখতে হবে। সংক্রামণ ব্যাধি যক্ষা, পোলিও, ম্যালেরিয়া, এইডস নিয়ন্ত্রণ
রয়েছে। অন্যদিকে অসংক্রামক রোগ যেগুলো মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত
সেগুলো বাড়ছে। আমাদের পরিমিত খেতে হবে। পুরো দেশে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভিটামিন
সি, ডি ও জিংক খেতে বলি। এতে করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
ক্যালরিতে ভারত-পাকিস্তানের
চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এখনও ১০-১৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য
সীমার নিচে বসবাস করে, কিন্তু কেউ না খেয়ে থাকে না। খাদ্যের অভাব যাতে না হয় সেদিকে
খেয়াল রাখতে হবে। দেশে খর্বাকৃতির মানুষের হার যেখানে আগে ৫০ শতাংশ ছিল, এখন তা নেমে
এসেছে ৩০-এ। স্কুল ফিডিং জোরদারের চেষ্টা করছে সরকার। ছেলে-মেয়েদের পুষ্টি সম্পর্কে
সচেতন করতে হবে। ফার্স্টফুড খাবার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয়
পুষ্টি সেবা কার্যক্রমের পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি তিন জনে একজন
অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে। যেখানে সামনে আসছে পুষ্টির বিষয়টি। একজন মানুষকে কোন বয়সে
কী ধরনের খাবার খেতে হবে সেটি চিন্তা করতে হবে। আমরা খাদ্যের পুষ্টির চেয়ে তৃপ্তিকে
গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, তাতে যথেষ্ট। তবে পুষ্টিতে জোর
দিতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল
অ্যাসোসিয়োশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় চিকিৎসাকে
যদি গুরুত্ব দিতে না পারি, তাহলে এগোতে পারব না। প্রয়োজনে এটার জন্য আলাদা বিভাগ চালু
করতে হবে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ওপরই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নির্ভর করছে। শিশুদের
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেগুলোকে আরও উন্নতমানে নিতে হবে, পুষ্টিতে
গুরুত্ব দিতে হবে। টার্শিয়ারি পর্যায়ে এখন রোগীদের মাটিতে থাকতে হয় যা খুবই দুঃখজনক।
এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে রেফারেল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের
মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ সবার
মধ্যে পুষ্টি সচেতনতা তৈরি করা। মাঠ পর্যায়ে এটির কার্যক্রম এ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে
এটি অন্তর্ভুক্ত করা। স্বাধীনতার শুরুতে পুষ্টিজনিত যেসব রোগ ছিল, তা থেকে অনেকটা বেরিয়ে
এসেছি। কিন্তু নগরায়ণের ফলে পুষ্টি চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। পুষ্টিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে
হলে কমিউনিটি ক্লিনিককে কাজে লাগাতে হবে। বলা হয়ে থাকে ২২টি মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কিন্তু বাস্তবে যদি আন্তমন্ত্রণালয় সম্পর্ক না বাড়ে তাহলে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন
কঠিন হয়ে যাবে।