মা হারানো সন্তানের আর্তনাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাকে ফিরে পেতে করুণ আকুতি- সবই পরিকল্পিতভাবে করেছিলেন খুলনার রহিমা বেগমের মেয়ে মরিময় মান্নান।
অপহরণ নয়, জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে রহিমা বেগমকে অপহরণ নাটক সাজানো হয়। কথিত অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে দেশব্যাপী আলোচিত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সংস্থাটির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
পাঁচ মাস তদন্ত শেষে পিবিআই জানিয়েছে, রহিমা বেগমকে কেউ অপহরণ করেনি। বরং পরিকল্পিতভাবে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাদের জমি কেনা প্রতিবেশী পাঁচটি পরিবারকে শায়েস্তা করতে রহিমা, তার দুই মেয়ে আদুরি ও মরিয়ম নাটকটি সাজিয়েছিলেন।
বাদী আদুরী আক্তার, পরিকল্পনাকারী রহিমা আক্তার এবং পুরো ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মরিয়াম মান্নান- তিনজনকেই আমরা তদন্তে পেয়েছি।
তদন্তে উঠে এসেছে, পুরো ঘটনার পরিকল্পনা হয়েছিল ঢাকায় মরিয়ম মান্নানের বাসায়। ঘটনার দিন মরিয়ম ঢাকা থেকে বিকাশের মাধ্যমে খুলনায় মাকে এক হাজার টাকা পাঠায়। সেখান থেকে ৯৮০ টাকা উত্তোলন করে নিজ বাড়ির পেছন থেকে আত্মগোপনে যান তিনি। পরবতীতে মরিয়মের কথা মতো স্থান বদলাতো মা রহিমা বেগম।
খুলনা পিবিআই’র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আত্মগোপনে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে রহিমা আক্তারকে হাত খরচ হিসেবেই হয়তো মরিয়ম মান্নান ঢাকা থেকে টাকা পাঠান। উনি ঢাকায় উনার মেয়ের কাছে গেলেন। উনার মেয়ে খুব সুন্দরভাবে উনাকে লুকিয়ে রাখেন। রাত ১১টা থেকেই যিনি তার মায়ের অপহরণের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে দেন, তিনি পরদিন বিকাল ৫টায় ঢাকা থেকে আসেন মহেশ্বরপাশার বাসায়। এখানেই আমাদের খটকা লাগে।
রহিমা বেগম অপহরণ মামলায় বেশ কিছুদিন জেলহাজতে ছিলেন জমির পাঁচ মালিক। তারা জানান, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন তারা। এজন্য তারা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
জমির মালিক হেলাল শরীফ বলেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। বাচ্চার ডেলিভারি হয়েছে নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগে। এখন আমার মেয়ে একদিন ভালো থাকে, একদিন অসুস্থ। এই মিথ্যা মামলার প্রেসারে পুরো পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জমির আরেক মালিক গোলাম কিবরিয়া বলেন, আদালতের শরণাপন্ন হবো। আমি চাই, প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হোক।
পিবিআই জানিয়েছে, আদালতে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে অপহরণ মামলা থেকে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মরিয়ম, তার মা ও বোনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে।