বাংলাদেশি কিশোরীকে
গণধর্ষণ মামলায় ভারতের দুই অভিযুক্তকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয়
আদালত। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ মহাকুমা অতিরিক্ত দায়রা আদালত-১
এর বিচারক শান্তুনু মুখোপাধ্যায় এই সাজা ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের
আইনজীবী অশোক প্রামানিক বলেন, গত বছর ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাগদা থানার হরিহরপুর
এলাকায় এক বাংলাদেশি কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে শরিফুল মল্লিক ও মহসিন বিশ্বাস নামে
দুই যুবককে গ্রেফতার করে বাগদা থানার পুলিশ। পরে কয়েক দফা রিমান্ডের পর আদালতের নির্দেশে
তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এতদিন তাদের কারাগারে
রেখেই বিচার প্রক্রিয়া চলছিল। শনিবার বিচারক তাদের উভয়কেই ২০ বছরের কারাদণ্ড ও ১
লাখ রুপি করে জরিমানা ধার্য করেছেন। পাশাপাশি তরুণীকে আটকে রাখার মামলায় তাদের আরও
ছয় মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরিমানাকৃত অর্থের অর্ধেক রাজ্য সরকারকে
এবং বাকি অর্ধেক নির্যাতিতা তরুণীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
তিনি আরও জানান,
নির্যাতিতা তরুণীর সাক্ষ্য প্রদানের পর প্রায় চার মাস আগে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এই বিষয়ে অভিযুক্তদের
পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ‘প্রোটেকশন অব
চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ (পকসো) ধারায়
মামলা রুজু করা হয়েছিল। কিন্তু পকসো ধারা থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গণধর্ষণের
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা শোনানো হয়েছে। এই বিচারের উপরে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ
হব।
জানা যায়, সংসারে
আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল
১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরী। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বাগদার হরিহরপুর নামক এলাকায় ওঠে। আর সেখানেই
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সে গণধর্ষণের শিকার হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায়
অভিযুক্ত দুই ভারতীয়কে গ্রেফতার করে বাগদা থানার পুলিশ। অন্যদিকে প্রশাসনের তরফে কিশোরীকে
হোমে পাঠানো হয়। পরে আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওই কিশোরীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও জানা যায়,
হরিহরপুরের বাসিন্দা শরিফুল মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সঙ্গেই চোরাই পথে ভারতে
আসে ওই কিশোরী। এরপর শরিফুলের বাড়িতেই অবস্থান করতে থাকে ওই কিশোরী। শরিফুল তাকে আশ্বাসও
দেয় কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে কোনো ভালো কাজ পাইয়ে দেওয়ার। কিন্তু এরই মধ্যে বাড়ি থেকে
ওই কিশোরীকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে শরিফুল ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তবে শরিফুলই
নয়, তাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তারই সহযোগী ২৮ বছর বয়সী মহসিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও।
ওই ঘটনার প্রায়
এক মাস পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর ওই কিশোরীর মুখ থেকেই ওই গ্রামের বাসিন্দারা বিষয়টি
জানতে পারেন। এরপরই খবর দেওয়া হয় বাগদা থানায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় থানায়
লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই কিশোরী। তার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ১৫ অক্টোবর পুলিশ
শরিফুল ও মহসিন নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তাদের উভয়ের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির
‘প্রোটেকশন অব
চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ (পকসো) আইনে
মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযুক্ত
দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের কাজে জড়িত ছিল। দরিদ্রের সুযোগ নিয়ে কাজের লোভ
দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করে দিত নারীদের। আর তার পরই নেমে আসত অত্যাচার।