যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রিসভা থেকে একে একে ৪০ জনের বেশি সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে শিগগিরই বরিস সরকারের পতন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার ( ০৫ জুলাই) থেকে এখন পর্যন্ত শীর্ষ চার মন্ত্রীসহ বরিস জনসনের মন্ত্রিসভা থেকে ৪০ জনের বেশি সদস্য পদত্যাগ করেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বরিস জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
এদিকে বরিস জনসনকে পদত্যাগ করতে বলার পর যুক্তরাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী মাইকেল গোভকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বরিস জনসন সরকারের গৃহায়ন, সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। মাইকেল গোভ ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০১০ সাল থেকে তিনি কনজারভেটিভ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরে তাকে গৃহায়ন, সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনকে বের করে আনা বা ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বরিস জনসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজও করেছিলেন মাইকেল গোভ।
এএফপি বলছে, একের পর এক মন্ত্রীর সরে যাওয়ার মধ্যেই বরিস জনসনের ‘ডান হাত’ হিসেবে খ্যাত সিনিয়র ওই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হলো। এতে করে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোতেও বরিস জনসনের নড়বড়ে অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানকে বরিস জনসন জানিয়েছেন, তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া মানে রক্তে হাত ডোবানো।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মিত্ররা বলেছেন, বরিস লড়াই চালিয়ে যাবেন। তার সংসদীয় প্রাইভেট সেক্রেটারি (পিপিএস) জেমস ডুড্রিজ স্কাই নিউজকে বলেছেন, জনসন উচ্ছ্বল মেজাজে রয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফ জনসনকে মারাত্বক আহত উল্লেখ করে খবর ছাপিয়েছে। এদিকে দ্য টাইমস তাদের শিরোনামে লিখেছে, জীবনের জন্য যুদ্ধ করছে জনসন। এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জনসনকে মরিয়া এবং প্রতারিত হিসেবে আখ্যায়িত করে খবর ছাপিয়েছে।
করোনার বিধি লঙ্ঘন করে একাধিক পার্টি আয়োজন করে সমালোচিত হয়েছিলেন বরিস জনসন। এজন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে পদত্যাগের চাপে ছিলেন তিনি। যদিও তিনি পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে উতরে যান। সরকার পরিচালনায় বরিস জনসনের সক্ষমতা নিয়ে নিজ দল ও দলের বাইরে তার ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন তিনি। রক্ষণশীল দলের এমপি ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন বরিস জনসন। এরপরও তাকে সরকারের ডেপুটি চিফ হুইপ করেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে আবারও ক্ষমা চান বরিস জনসন। তবে নিজ দল থেকেই এবার তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। যদিও বরিস জানিয়েছেন, তিনি তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। ফলে এবারও অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হতে পারেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।