Logo
শিরোনাম

পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা: দেড় বছরে কোটি টাকা লেনদেন

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৯ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৮০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে অভিভাবকদের ফোন করা হতো। ছেলে হলে বলতো, মাদকসহ আটক হয়েছে আর মেয়ে হলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটক রয়েছে। সন্তানকে ছাড়িয়ে নিতে অভিভাবকের কাছে দাবি করা হতো টাকা। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ফোনে এমনভাবেই অভিভাবকদের ভীত-সন্ত্রস্ত করতো। তারা আসল না নকল গোয়েন্দা পুলিশ চেক করার কোনও সুযোগ দিতো না অভিভাবকদের।

তারা গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির বিকাশ এবং রকেট নাম্বারে দাবি অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দিতো। একেক জনের কাছ থেকে দাবি করা হতো একেক অংকের টাকা। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করতো প্রতারক চক্রটি। টাকা পাওয়ার পর চম্পট দিতো চক্রের সদস্যরা। এমনই একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণার সাথে জড়িত থাকার তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেফতারের পর প্রতারক চক্রের ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং ট্রানজেকশন পর্যালোচনা করে এক কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর এসব প্রতারণার টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়ি ত্রিশালে তৈরি করছেন পাঁচতলা বাড়ি। পরিচালনা করে আসছিলেন মাছের খামার।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে গ্রেফতার করা হয় ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়া আলামিন ওরফে আমিন ওরফে বিন ইয়ামিন (২৭) ও তার সহযোগী শরিফুল ইসলাম (২১)-কে।

চক্রের ওই দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আর্থিকভাবে অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের ফোন দেওয়া হতো। পরিবারের সদস্যরা তাদের ছেলে কিংবা মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে প্রতারক বিন ইয়ামিন নিজেই কণ্ঠ পরিবর্তন করে কথা বলতো।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতো সে। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা তাদের সন্তানকে দ্রুত ছাড়িয়ে আনতে দাবি করা টাকা বিকাশ এবং নগদ একাউন্টে পাঠিয়ে দিতো। ফোন দিয়ে এমনভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত করত যাতে এ সম্পর্কে আর কারও কাছ থেকে কোনও ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে। সহযোগী শরিফুল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আসা টাকা তুলে বিন ইয়ামিনের কাছে পৌঁছে দিতো।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। ভুক্তভোগীদের তালিকায় শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ রয়েছে, এমনকি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের আত্মীয়ও রয়েছে তালিকায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সাথে জড়িত থাকা এই বিন ইয়ামিন প্রতারণা করে পাওয়া টাকা দিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করছে। ২টি পুকুরে মাছ চাষ করছে। তার বাড়ির আশেপাশে লাগিয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

গ্রেফতারের পর বিভিন্ন তথ্য এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, গত প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তার বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম্বারে এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা কর্মকর্তারা একাধিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম্বারে ৮২ লাখ, ২৬ লাখ, ৯ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন,  ফোন করে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে জানানো হয়, আপনার সন্তান মাদকসহ ধরা পড়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে টাকা লাগবে। পরবর্তীতে প্রতারক চক্রের দেওয়া বিকাশ এবং নগদ নাম্বারে তাদের দাবি করা টাকা পাঠায়। পেশায় চিকিৎসক মা প্রতারক চক্রের এমন ফোন পেয়ে কোনও ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই টাকা দিয়ে দেয়। এমনভাবে ফোন করা হতো যাচাই-বাছাইয়ের কোনও সুযোগ থাকতো না বলে জানান তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, যেকোনও শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে কম সময়ে টাকা পাঠানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। নানা সময় এসব মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম অপব্যবহার করছে অনেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিতেও ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এত টাকা লেনদেন হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি কিভাবে এড়ালো সে বিষয়টিও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান সরদার বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এই প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের এমনভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত করতো, মেয়েকে ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে এমন ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো তারা।

ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, বিভিন্ন সময় প্রতারণার টাকা দিয়ে সে তার গ্রামের বাড়িতে দুটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছে। ১০ বিঘা জমিতে মাছের খামার করেছে। তিনি পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে যাকেই ফোন দেওয়া হোক না কেন তিনি গোয়েন্দা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে সঠিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত হবেন।


আরও খবর

রাজধানীর ৯০ ভাগ হিজড়াই নকল

শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩