আবার এলো ঘুরে মাহে রমজান। করোনাভাইরাসের আক্রমণে নাকাল বিশ্ব কিছুটা স্বস্তি পাওয়ায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমদের এবারের রমজান উৎসব ফিরেছে পুরনো আবহে। যা গত দুই বছর ধরে ছিল না।
গত বছর কিছুটা শিথিল থাকলেও ২০২০ সালের রমজান ছিল ঘরমুখো। মসজিদে মুসল্লিরা পাঁচ জনের বেশি নামাজ পড়তে পারেনি। কোনো ইফতার বা সেহরি পার্টি ছিল না। গত রোজায় (২০২১) সেটি কিছুটা শিথিল হলেও পুরোপুরি ছিল না। তবে এবার করোনার প্রকোপও কম। সরকার ভ্যাকসিন দিয়েছে গণহারে। ফলে মানুষের মধ্যে এসেছে সচেতনতা। নেই বিধিনিষেধও। এ কারণে এবার রোজায় সবাই সমবেতভাবে তারাবি যেমন পরতে পারছেন, সেই সঙ্গে থাকছে ইফতার-সেহরি পার্টির কালচারও।
করোনার শুরু থেকে মানুষের মধ্যে ভয় যেমন কাজ করেছে, তেমনি সচেতনতা তৈরি করতেও সময় লেগেছে। ফলে করোনার শুরুতে ২০২০ সালে ঘরের বাইরের সব আয়োজন ছিল বন্ধ। দেশে ছোট-বড় হাজার হাজার সংগঠনের ইফতার বা পুনর্মিলনি দেখা যেত, যা ২০২০ সালে একেবারেই ছিল না। গতবারও উল্লেখযোগ্য হারে হয়নি। তবে এবার সেটি ভেঙে সবাই পুরনো আবহে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মসজিদে আবারও ইফতার কার্যক্রম
মাহে রমজান এগিয়ে আসায় ইতোমধ্যে সেহরি-ইফতারের সময়সূচী ঘোষণা করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলামী বিধান মতে মাসব্যাপী রোজা পালনের জন্য কিছু আবশ্যিক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। যার মধ্য রয়েছে তারাবি নামাজ, সেহরি ও ইফতার। রোজার মাসে মুসলমানরা এগুলো যৌথভাবে পালন করে থাকেন।
এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রায় চার হাজার লোকের ইফতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে চালু থাকে ইফতার। সেই সঙ্গে ব্যক্তি ও পরিবারেও ইফতারের দাওয়াত কালচার চালু রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, গত দুই বছরের প্রেক্ষাপট ছিল একরকম, তবে এবার ভিন্ন। সরকারের বিধিনিষেধ সবসময় আমরা মেনে চলি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে, ভ্যাকসিন নিয়েছে, তাই সরকার সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে। এ জন্য বলা যায়, রোজা ফিরছে ২০২০ এর আগের ধারায়।
অলি গলিতে ইফতারের দোকানের প্রস্তুতি
গেল দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে মহল্লার অলিতে গলিতে খুব বেশি ইফতারের দোকান বা পসরা দেখা যায়নি। তবে এবার আবারও অলি গলিতে দোকান সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দোকানিরা। মগবাজার, বেইলি রোড, ইস্কাটনের নিয়মিত কতিপয় ব্যবসায়ীরা জানান, গেল দুই বছর তারা ঠিকমতো ইফতারের দোকান সাজাতে পারেননি। কিন্তু এবার তারা ধুমসে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে, ঢাকার ইফতার মানেই চকবাজারের জমজমাট ইফতার বাজার। জানা গেছে, চকবাজারের শাহী মসজিদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা এবার ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন নানা স্বাদের বিভিন্ন আইটেমের ইফতার বিক্রির। তারা আশা করছেন, প্রায় দুই বছর পর এবার ইফতারের দোকানগুলো থেকে খাবারের মনকাড়া সুবাস আর বিক্রেতাদের ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ হাঁকডাকে মুখরিত হবে চকবাজার এলাকা।
উল্লেখ্য, রহমত বরকতের মাস, সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান শুরু হয়েছে। শনিবার (২ এপ্রিল) চাঁদ উঠার পর থেকেই রমজানের আবহ শুরু হয়ে গেছে। রমজান এলেই সারা দেশে শুরু হয়ে যায় এক ভিন্ন মাত্রার উৎসবের আমেজ। দিনব্যাপী পানাহার বিরত থেকে সন্ধ্যায় একটি ইফতারের আনন্দ। অলিতে গলিতে সেহরি ইফতারে সেকি আনন্দ।
শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয় রমজান। মানুষের পাশে দাঁড়ায় মানুষ। একে অন্যের খোঁজ নেওয়া, সেহরি ইফতারে দাওয়াত দেওয়া, দান-সদকাহ্ বৃদ্ধি করাসহ কমে আসে অপরাধ কার্যাবলীও। এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলোও ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকে। সবার মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়। সবকিছুই দেখা মিলতে পারে এবারের রোজায়, যা অনুপস্থিত ছিল বিগত দুই বছরে।