Logo
শিরোনাম

পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে নারী

প্রকাশিত:বুধবার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৯০০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। দুই দপ্তরের ভিন্ন পরিসংখ্যান হলেও সর্বশেষ বিবিএসের তথ্যে পুরুষের সাক্ষরতার তুলনায় নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। এখনো দেশে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা ২৫.৩৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দিবসের কর্মসূচি ও সাক্ষরতার তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

গত বছর এ দিবস উদযাপনের সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। পূর্বের বছরের ন্যায় প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছিল।

তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। এ হিসেবে দেশে এখনো মোট জনসংখ্যার ২৫.৩৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর রয়েছেন।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ঘোষণা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা । ২০১০ সালে সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে এবং উল্লিখিত সময়ের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে এখনো ২৫.৩৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৪ কোটি ১৮ লাখ ৫১ হাজার ১৯৩ জন নিরক্ষর। এ বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে কত সময় লাগবে? এমন প্রশ্নের উত্তর নেই প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কাছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছেও ব্যাখ্যা নেই।

এদিকে, সাক্ষরতা নিরূপণে সরকারি সংজ্ঞা এবং বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংজ্ঞার মধ্যে মস্ত বড় ফারাক রয়েছে। দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েও আছে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হবে।

সর্বশেষ বিবিএসের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সাক্ষরতার হারে বর্তমানে নারীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন দেশের পুরুষরা। এর মধ্যে পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬.৫৬ শতাংশ আর নারীদের ৭২.৮২ শতাংশ।

বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ২৩.৮৯ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারির ততুলনায় সাক্ষরতার হারে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫১.৭৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, পল্লী এলাকার চেয়ে শহর এলাকায় সাক্ষরতার হার বেশি। জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী পল্লী এলাকার মোট সাক্ষরতার হার ৭১.৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৩.২৯ শতাংশ, নারীদের সাক্ষরতার হার ৬৯.৯৩ শতাংশ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৫১.৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া শহর এলাকায় মোট সাক্ষরতার হার ৮১.২৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষের সাক্ষরতার হার ৮৩.১৮ শতাংশ, নারীদের ৭৯.৩০ শতাংশ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৫৫.২৮ শতাংশ।

স্বাক্ষরতার সর্বোচ্চ হার ঢাকা বিভাগে; ৭৮.০৯ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন হার ময়মনসিংহ বিভাগে; ৬৭.০৯ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে সাক্ষরতার হার ছিল ৫১.৭৭ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১১ সালে বরিশাল বিভাগে সাক্ষরতার হার ছিল সর্বোচ্চ ৫৬.৭৫ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে সাক্ষরতার হার ছিল সর্বনিম্ন ৪৫.০১ শতাংশ।

জেলাগুলোর বিবেচনায় সাক্ষরতার হারে এগিয়ে আছে পিরোজপুর। এ জেলায় সাক্ষরতার হার ৮৫-এর বেশি। আর সবচেয়ে তলানিতে আছে জামালপুর (৬১ দশমিক ৫৩)। এগিয়ে থাকা বিভাগ ঢাকার ১৩টি জেলার মধ্যে সাক্ষরতার হার বেশি ঢাকা জেলায়, প্রায় ৮৫। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে কিশোরগঞ্জ জেলা (৬৭ শতাংশের বেশি)।

অবশ্য শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠনের মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতার হার হচ্ছে ৮৬.৬ শতাংশ। আমাদের এ হার বর্তমানে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে এখনো আমরা ১১ শতাংশ পেছনে রয়েছি। জনশুমারিতে যেহেতু কম সাক্ষরতার হার। এর কারণ সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। ১৫-৪৫ বছর বয়সী যাদের সাক্ষরতা নেই, তাদের চিহ্নিত করে সাক্ষরতার সঙ্গে দক্ষতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যারা ঝরে পড়ে, তাদের চিহ্নিত করে দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। আবার ভৌগলিক কারণেও যারা পিছিয়ে আছে, তাদের সাক্ষরতার আওতায় আনতে হবে। সাক্ষরতার জ্ঞান যারা অর্জন করবে তাদের সবাই টেকনিক্যালে যাবে না। তাদের সংক্ষিপ্ত দক্ষতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব করার জন্য সরকারকে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমরা শিক্ষায় এ যে ঘাটতি রয়েছে সেখানটায় একটি স্ট্যাজেটিক প্লান করে বিনিয়োগ করতে হবে।

সাক্ষরতা সংজ্ঞায় এক সময় কোনো ব্যক্তি নিজের নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন বলা হতো। এখন যে ব্যক্তি নিজের ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবেন, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবেন এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবেন, তাকেই সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


আরও খবর