ইউক্রেনে যুদ্ধ
শুরু করার কারণে রাশিয়ার থেকে তেল, গ্যাস, কয়লা কেনা বন্ধ করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কার তোয়াক্কা না করে তারই
মিত্ররা রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, বিষয়টি ওয়াশিংটনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এমনকি
জ্বালানি বিক্রিতে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দামে অনেক বেশি ছাড় দিয়েছে রাশিয়া, এই
ঘটনায় উল্টো আরও চাপে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চলুন জেনে নেওয়া
যাক, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকার পরও এখনও কোন কোন দেশ রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত
রেখেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
(ইইউ): ২৭ সদস্য বিশিষ্ট জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন যার ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং ২৭ শতাংশ অপরিশোধিত
জ্বালানি তেলের উৎস রাশিয়া। যদিও জোটটি রাশিয়ান জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছে,
তারপরও নিকট ভবিষ্যতে এখনও এর বিকল্প পাওয়া যায়নি। ইইউ রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার তেল কোম্পানি
রোসনেফ্ট, ট্রান্সনেফ্ট এবং গ্যাজপ্রম নেফ্টের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে
কিন্তু তারপরও রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
চীন: চীন রাশিয়ান
তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে চীন-রাশিয়া বাণিজ্যে এখনও তেমন কোনো প্রভাব
পড়েনি। উল্টো ইন্ট্যারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রাশিয়া থেকে
তেলভর্তি কার্গো জাহাজ চীনে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার মোট রপ্তানির ২৭
শতাংশ তেল কিনেছিল চীন, যার মূল্য ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও এটি চীনের মোট তেল আমদানির
মাত্র ১৬ শতাংশ।
ফ্রান্স: ২০২১
সালে ফ্রান্স তার মোট জ্বালানি তেলের ৯.৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে কিনেছিল। রাশিয়ান তেলের
কোনো বিকল্প না থাকায় চলতি এখনও রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে দেশটি।
জার্মানি: মিরো
জার্মানির সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার। প্রতিষ্ঠানটি জার্মানির প্রয়োজনের ১৪ শতাংশ তেল
শোধন করে যার পুরোটাই রাশিয়া থেকে আসে। এছাড়া ফিলিপস, পিকেসি, রোসনেফ্ট-জার্মানি, ড্রুজবা,
লিউনা, টোটাল এনার্জিসহ আরও কয়েকটি শোধনাগার রয়েছে যারা সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার তেলের
ওপর নির্ভরশীল।
ভারত: ভারতে যে
পরিমাণ তেল ব্যবহার করা হয় তার মাত্র ১ শতাংশ বা তারও কম রাশিয়া থাকে আসে। গত বুধবার
বিশ্ববাজারে ব্রেন্টের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের কাছাকাছি। রাশিয়া সেটিকে ছাড়
দিয়ে ৭৫-৮০ ডলারে তেল বিক্রি করছে। শুধু মার্চেই প্রতিদিন ৩ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল
কিনেছে ভারত যা, ২০২১ সালের গড়ের তুলনায় কমপক্ষে চারগুণ বেশি। এছাড়া সম্প্রত রাশিয়া
থেকে সস্তায় আরও ৩০ লাখ ব্যারেল তেল কেনার ঘোষণা দিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। যা
আগামী মে মাসের মধ্যে ভারতে পৌঁছাবে।
এসব বড় বড় ক্রেতা
দেশ ছাড়াও বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ
রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। এসব দেশের জন্য তেলের নতুন উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন।
২০১৯ সালে বিশ্বের
৪৮টি দেশ রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনেছিল। এরমধ্যে বেলারুশ, কিউবা, কুরাকাও, কাজাখস্তান,
লাটভিয়া ও স্লোভাকিয়া তার চাহিদার ৯৯ শতাংশের বেশি তেল আমদানি করে রাশিয়া থেকে।
রাশিয়ার কর্মকর্তাদের
ভাষ্যমতে, তেল বিক্রির টাকা রাশিয়ার পৌঁছানোর জন্যও তেমন কোনো সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে
লেনদেনের বিকল্পও ঠিক করে রাখা হয়েছে।