কক্সবাজারের উখিয়া
কুতুপালং ক্যাম্পের সামনে গড়ে ওঠা একটি মার্কেটে দোকান রয়েছে অন্তত ২ হাজার। ক্যাম্পের
পাশে রয়েছে এমন আরও মার্কেট।
এসব মার্কেটে
মিলছে অভিজাত কাপড়ের শোরুম, পারলার, কসমেটিকস, জুয়েলারি শপ, দামি ব্র্যান্ডের মোবাইলের
শোরুম।
অনুসন্ধানে উঠে
এসেছে, বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গাদের এসব বিলাসী জীবনের পেছনের গল্প।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ওই মার্কেটের ৯০ শতাংশ ক্রেতা খোদ রোহিঙ্গারা। পণ্যের বিক্রেতাও
তারা।
এছাড়া রোহিঙ্গা
সন্ত্রাসীদের মনোরঞ্জনে জলসা ঘরে রয়েছে নারী ও মদের ব্যবস্থা। সেখানে বসে খেমটা নাচের
আসর।
অনেক অভিজাত কাপড়ের
দোকান সেখানে। আছে অন্তত ২৫টি জুয়েলারি শোরুম, ১০টি বিউটি পারলার, দুইশর বেশি দামি
ব্র্যান্ডের মোবাইল শোরুম।
প্রায় প্রতিটি
ক্যাম্পের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা চাহিদা সাপেক্ষে আরও দামি কাপড় কিংবা
আসবাবপত্র সরবরাহ করেন রোহিঙ্গা ক্লায়েন্টদের।
নৃশংসতা আর মাদক
ব্যবসা পুঁজি করে বিলাসী জীবনযাপন করছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়া, টেকনাফে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা
ক্যাম্পগুলোর পাশের বিভিন্ন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন
পণ্য। সাদা চোখে কর্মহীন মনে হলেও রোহিঙ্গারাই এসব বিলাসী পণ্যের ক্রেতা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
নিরীহ রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে বিশেষ ফায়দা লুটে নিচ্ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে গড়ে ওঠা
আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আল মাহাজসহ
বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যরা। আবার মানবাধিকারের কথা বলে নেপথ্য থেকে তাদের সমর্থন
জোগাচ্ছে দেশি-বিদেশি কিছু উন্নয়ন সংস্থা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ডা. আজিজ। বখতিয়ার মার্কেটে রয়েছে ওষুধের দোকানের আড়ালে
তার মাদক ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। ক্যাম্পে তার বাড়ি পাঁচ শতাংশের
ওপর। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও বাড়ির ভিতরের সাজসজ্জা চোখে পড়ার মতো।
একই ক্যাম্পের
আরেকজন রোহিঙ্গা ডা. ওসমান। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুটি মাদক মামলা। বর্তমানে তিনি সরকারি
কাজে বাধা দেওয়ার অপরাধের মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ক্যাম্পের ভিতরে তার বাড়ি কমপক্ষে
৫ শতাংশের ওপর। ঘরের অভিজত আসবাবপত্র যে কারও নজর কাড়বে।
একই ক্যাম্পের
রোহিঙ্গা হাফেজ জালাল। ক্যাম্পে অভ্যন্তরে রয়েছে তার একটি মাদরাসা। অভিযোগ, আরসার সঙ্গে
রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা তার মাদরাসায় পড়তে আসে।
মুন্না গ্রুপের
সেকেন্ড ইন কমান্ড দেলোয়ার রীতিমতো আতঙ্ক। তার সরাসরি নেতৃত্বে চলছে মাদক ব্যবসা। এই
প্রতিবেদক ক্যাম্পে অবস্থানের সময় চাঁদা না দেওয়ার অপরাধে এক নিরীহ রোহিঙ্গার কান কেটে
দেয় সে। পরে ওই নিরীহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি রাশিদুল ইসলামকে অবহিত করেন।
ক্যাম্প-১২ বি-ব্লকের
বাসিন্দা জাহিদ হোসেন লালু আরসার ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে
চিহ্নিত। ৩৫ বছরের লালু এরই মধ্যে অফিশিয়ালি পাঁচটি বিয়ে করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে,
বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কিছু লোকের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মাঝেমধ্যে ক্যাম্প-১-এর
হেড মাঝি মশিউল্লার পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানকার কয়েকটি ঘরে বসে বিশেষ বৈঠক। এসব বৈঠকে অংশ
নেন শীর্ষ কমান্ডার শমির উদ্দীন, আবদুর রহিম, খায়রুল আমীন, ফয়জুল্লাহ, জুবায়ের, মাস্টার
রফিক, হেফজুর রহমান। বৈঠক শেষে সেখানে রাখা হয় মনোরঞ্জনের বিশেষ ব্যবস্থা। শমির উদ্দীনের
তিনটি বিয়ের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, খুন,
ডাকাতি, ছিনতাই করে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য জানান দিচ্ছে ক্যাম্পগুলোয় গড়ে ওঠা সশস্ত্র
গ্রুপগুলো। ক্যাম্পের অভ্যন্তরের দোকান ও বাড়ি টার্গেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছে চাঁদার হার।
পছন্দ অনুযায়ী মেয়েদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করছে। মাঝেমধ্যে সুন্দরী তরুণীদের বিয়েও করছে
জোরপূর্বক। সন্ত্রাসীদের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার দুঃসাহস দেখানোর মতো অভিভাবক
পাওয়া খুবই বিরল। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া পরিবারের ওপর নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
জলসা ঘরের পাহারায়
থাকে গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সারা রাত ফুর্তি করার পর ভোরের দিকে এসব দুর্বৃত্ত
অজ্ঞাত স্থানে চলে যায় বলে জানিয়েছেন অনেক নিরীহ রোহিঙ্গা সদস্য।
তবে আরসার অনেক
সদস্য সুন্দরী তরুণীদের কিছুদিনের জন্য বিয়ে করেন। কিছুদিন পর অন্য কোনো সুন্দরীকে
চোখে পড়লে আগের জনকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।
জানতে চাইলে এপিবিএন-৮ (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন)-এর অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা অনেক প্রস্তাব দিয়েছি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে। একটা প্রস্তাব ছিল তালিকাভুক্ত অপরাধীদের পরিবারে রেশন সুবিধা বন্ধ করার। তবে এ প্রস্তাবে তারা সাড়া দিচ্ছে না। একই সঙ্গে ক্যাম্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। তাতেও সাড়া মিলবে বলে মনে করছি না।