শরিয়তে এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা রোজার
দিন ছাড়া বৈধ, কিন্তু রোজা পালনরত অবস্থায় সেগুলো করা যায় না।
ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ও স্ত্রীসম্ভোগ।
এর দ্বারা রোজা ভেঙে যায়। সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পানাহার
করো, অতঃপর রাত আসার আগ পর্যন্ত রোজা পালন করো। মসজিদে যখন তোমরা এতেকাফ অবস্থায়
থাকবে, তখন নারীসম্ভোগ থেকে বিরত থাকবে।’
এই আয়াতে কারিমার মাধ্যমে রোজা পালনের
সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এই সময়ে পানাহার ও
স্ত্রীসম্ভোগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে ভুলক্রমে কেউ কিছু খেলে ও পান করলে তাতে রোজা
ভঙ্গ হবে না। সহিহ্ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবি করিম (স.) বলেন, ‘যদি কেউ ভুলক্রমে পানাহার করে, সে যেন
তার রোজা পূর্ণ করে নেয়।’ কিন্তু, কেউ ভুলে পানাহার করার পর যদি সে মনে করে তার রোজা
ভেঙে গেছে, এরপর যদি সে কিছু খায় ও পান করে, তাহলে তার রোজা হবে না। পরে এই রোজা
তাকে কাজা করতে হবে।
রোজা রাখা অবস্থায় মুখ দ্বারা ওষুধ সেবন
করা যাবে না। অনুরূপভাবে কান, নাক ও মলদার দ্বারাও ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। এতে রোজা
ভেঙে যায়। মোটকথা, যে ওষুধের প্রভাব সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে পৌঁছাবে, তা গ্রহণ করায়
রোজা ভেঙে যাবে। তবে রোজা অবস্থায় গ্লুকোজ ও বলবর্ধক ইনজেকশন ছাড়া জীবন রক্ষাকারী
সব ধরনের ইনজেকশন ও করোনার টিকা নেওয়া যাবে। এনজিওগ্রাম, আলট্রাসনোগ্রামও করানো
যাবে। এন্ডোসকপির বিষয়ে মাসআলা হচ্ছে, যদি ভেতরে কোনো ওষুধ দেওয়া হয়, তাহলে রোজা
ভেঙে যাবে, শুধু নল বা পাইপ প্রবেশ করানোর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। অক্সিজেন গ্রহণ
করলে দুই অবস্থায় যদি ওষুধমিশ্রিত অক্সিজেন হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। কেবল বাতাসের
অক্সিজেন গ্রহণ করলে তার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষতস্থানে
মলম ও ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তেল-সুগন্ধিও ব্যবহার করা যাবে। তবে কান ও নাকের ভেতরে
তেলের ফোঁটা দেওয়ার পর যদি তা মাথার ভেতরে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।
ছোলার সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি খাদ্য
দাঁতের মধ্যে আটকে থাকার পর তা গিলে খেলে রোজা ভেঙে যাবে। ছোলার পরিমাণের চেয়ে কম
হলে রোজা ভাঙবে না। সাহরি শেষ করে পান খেতে খেতে তা মুখে রেখে ঘুমানো অবস্থায় যদি
সুবহে সাদিক হয়ে যায়, তাহলে রোজা হবে না। কুলি করতে গিয়ে হঠাৎ গলার ভেতরে পানি চলে
গেলে রোজা ভেঙে যাবে। এজন্য রোজা পালনরত অবস্থায় গড়গড়া করে কুলি করা নিষেধ। বৃষ্টির
পানি মুখে পড়ার পর যদি তা গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। দাঁত থেকে বের
হওয়া রক্ত বা রক্ত মিশ্রিত থুতু গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। তবে মুখের মধ্যকার থুতু
ও শ্লেষ্মা ভেতরে যাওয়ায় রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
ধূমপান করলে রোজা ভেঙে যাবে। ইচ্ছাকৃতভাবে
আগরবাতির ধোঁয়া গলার ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি রান্নার
সময় কোনো ধোঁয়া বা রাস্তার ধুলাবালু নাক ও গলার ভেতরে চলে যায়, তাহলে এর দ্বারা
রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে রোজা ভেঙে
যাবে। তবে অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি হলে তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অনিচ্ছায় বমি করল, তাকে
উক্ত রোজা কাজা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল, তাকে সেই রোজা
কাজা করতে হবে। (হাদিসটি আবু দাউদ ও তিরমিযি শরিফে উল্লেখ হয়েছে)
রোজার দিনে ঘুমে স্বপ্নদোষ হলে তাতে
রোজার কেনো ক্ষতি হয় না। রোজা অবস্থায় শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে কিংবা
প্রয়োজনবশত সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করলে তার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে
রোজা রেখে অপ্রয়োজনে ইচ্ছাকৃত রক্ত বের করা মাকরুহ। রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার
করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে নাকে নস্যি ব্যবহার করা যাবে না। রোজা রেখে সুরমা লাগানো,
গাছের কাঁচা ডালা দিয়ে মেসওয়াক করা জায়েজ আছে; এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে
টুথপেস্ট ও মাজন ব্যবহার করলে তা গলার মধ্যে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি, তাই রোজা পালনরত
অবস্থায় এগুলো ব্যবহার মাকরুহ বলা হয়েছে। রোজা রেখে পরনিন্দা নিষেধ। এর দ্বারা অনেকের
মতে রোজা ভেঙে যায়। তবে হানাফি মাজহাব মতে, রোজা ভঙ্গ না হলেও মাকরুহ হবে। মিথ্যা
বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এবং অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ দ্বারা রোজা মাকরুহ হয়।