বাংলাদেশের
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ঢাকায় রুশ দূতাবাসের
দেওয়া বিবৃতিতে ‘অনেকগুলো ভালো কথা রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অভ্যন্তরীণ
বিষয়ে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে
ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সেসব দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকারের
কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের
বিষয়টি তুলে ধরেছে রুশ দূতাবাস। আমরা সবসময় এমন বিবৃতি দেখি না, তবে যারা ভিয়েনা
কনভেনশন অমান্য করেন, তাদের বোধোদয় হওয়ার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।’
হাছান মাহমুদ
বলেন, ‘প্রথমত কিছু কিছু দেশ যখন সরকারকে চাপে রাখতে চেষ্টা করে, তখন তারা মানবাধিকারের
ধুয়া তোলে। অর্থাৎ সরকারকে চাপে রাখতে মানবাধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। রুশ
বিবৃতিতে সেই কথাও এসেছে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ
নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু মন্তব্য ও পদক্ষেপে অসন্তোষ জানিয়েছে সরকার। আর এ ঘটনার
সূত্রপাত গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার
হাস ৯ বছর আগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান।
পিটার হাস সুমনের
বাসায় যাওয়ার পর সেখানে হাজির হয় ‘মায়ের কান্না’ নামে অন্য একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মায়ের কান্নার সদস্যরা সেদিন পিটার
হাসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান, যাতে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের
অভিযোগ তদন্তে সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়।
তবে পিটার হাস
সেই স্মারকলিপি নেননি এবং সেখান থেকে দ্রুত চলে যান। পরে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে
মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান।
অবশ্য পিটার
হাসের সেদিনের কর্মকাণ্ড পছন্দ করেনি সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী
হাছান মাহমুদের একাধিক বক্তব্যে সরকারের এ মনোভাব উঠে আসে। তবে এ ঘটনায় ওয়াশিংটনে ঢাকার
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডেকে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। পাশাপাশি
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বক্তব্যে বলা হয়েছে, তাদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে থাকে মানবাধিকার।
এর মধ্যে মঙ্গলবার
ঢাকার রুশ দূতাবাস তাদের ফেসবুক পোস্টে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ
বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের মতো যে দেশগুলো বিদেশি
শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি গ্রহণ
করে, সে দেশগুলোর প্রতি রাশিয়া পুরোপুরি সমর্থন জানায়।’
এতে আরও বলা
হয়, ‘ভিন্ন
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা
সম্পর্কিত ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক
নীতির বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই।
দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে হস্তক্ষেপ
না করার নীতি লঙ্ঘনের সমস্যাটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ অনেক দেশ বিশ্বাস
করে, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে ওই নীতি লঙ্ঘন করতে পারে।’