পল্লবীতে শিশু
ছেলের সামনে বাবা সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকারী মানিক র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে
নিহত হয়েছে। মিরপুরের ইষ্টার্ণ হাউজিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার (২১ মে) সকাল
১১ টায় এ তথ্য জানায় র্যাব সদর দপ্তর। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার
খন্দকার আল মঈন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
যে হত্যাকাণ্ডের
ভিডিও দেখলে যে কারো গা শিউরে উঠবে। খোদ রাজধানীর ঢাকার পল্লবী এলাকায় সড়কে দিনদুপুরে
বাবাকে কুপিয়ে হত্যার ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে হয়েছিল ওই শিশু সন্তানকে। সাবেক সংসদ সদস্য
আউয়ালের নির্দেশেই ঘটানো হয় এমন নৃশংস ঘটনা। পরিকল্পনা মাফিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে
জীবন শেষ করে দেয়ার কিলিং মিশন সম্পন্ন হয়েছিলো মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে। প্রথমে
ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় কিলার সুমন। এরপর মানিকসহ বাকিরা কোপাতে থাকে। মনির হাঁটু
এবং মানিক উপর্যুপরি সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে জখম করতে থাকে। এসময় বাবুসহ আরও কয়েকজন কিলার
বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে থাকে। ঘটনা শেষে সুমনসহ বাকিরা সেখান থেকে পালিয়ে
যায়। এসময় সুমন এক নম্বর আসামি লক্ষীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়ালকে মোবাইলে কল দিয়ে
জানায় ‘স্যার ফিনিশড’!
জমি নিয়ে বিরোধের
জের ধরে সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব। তারা বলছে, হত্যার
শিকার এই ব্যক্তির কাছ থেকে এক বিঘার বেশি পরিমাণ জমি কেনার চেষ্টা করছিল সাবেক এমপি
আউয়ালের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘হ্যাভিলি প্রপার্টি’। নিহত সাহিনুদ্দিন ও তার স্বজনরা এই জমির
মালিক। কম টাকায় জমি কিনতে না পারায় এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার
(২০ মে) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব
তথ্য জানান পুলিশের এলিট ফোর্সটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল
মঈন।
তিনি বলেন, গত
১৬ মে দুপুরে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীনকে চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে
কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা ছিল র্যাব তাদেরকে গ্রেপ্তারে
অভিযান শুরু করে। ১৯ মে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে কিলিং মিশনে যুক্ত থাকা হাসানকে গ্রেপ্তার
করা হয়। ২০ মে রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এম এ আউয়ালকে ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার
করা হয়। এছাড়া পটুয়াখালীর বাউফল থেকে ১৯ নম্বর আসামি জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার
করে র্যাবের আরেকটি দল। তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
কমান্ডার মঈন
জানান, হত্যার ঘটনার ৪/৫ দিন আগে সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে মোহাম্মদ
তাহের ও সুমন এই হত্যার পরিকল্পনা করে। মাঠ পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুমনকে
দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর সুমন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। এসময় বেশ কয়েকজন
কিলিং মিশনে জড়িত ছিল।
হত্যাকাণ্ডের
পর আসামিরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়। ১৭ মে মামলার ১৩ নম্বর আসামি দিপুকে
র্যাব-৪ গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানায় সোপর্দ করে। গ্রেপ্তার মূল আসামি এম এ আউয়াল একজন
জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন জমি দখল, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার
করত এবং প্রতিমাসে মাসোয়ারা বাবদ ১০-১২ হাজার টাকা নিত। তাছাড়া বিভিন্ন কাজেও টাক নিত।
এই সন্ত্রাসী দল রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত
ছিল বলে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নিহত সাহিনুদ্দীন
ও সুমন গ্রুপের মধ্যে গত দুই মাসে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এসব ঘটনায় পল্লবী থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। এমএ আউয়াল নিজের আবাসন প্রকল্প পাহারার কাজে
সন্ত্রাসী লালন-পালন করে থাকেন। স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য কিলার সুমনকে আউয়াল মাসে
১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিতেন। হত্যাকাণ্ডে তাদের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। তবে এ কাজে কত
টাকা ব্যয় হয়েছে নির্দিষ্ট করে তা জানাতে পারেনি র্যাব। র্যাব জানিয়েছে, টিটুর মাধ্যমে
সুমনের কাছে হত্যাকাণ্ডের জন্য টাকা গেছে।