Logo
শিরোনাম

সাগর রুনি হত্যা: ৪৮ ঘণ্টায় তদন্তের আশ্বাস পূরণ হয়নি ১১ বছরেও

প্রকাশিত:শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৯০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তদন্ত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন। তবে এরই মধ্যে ১১ বছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এসেছে তিনবার। একাধিক সংস্থার হাত বদলে আদালত থেকে ৯৫ বার সময় নেয়া হলেও শেষ হয়নি তদন্ত।

সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলম আগামী ৫ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সাগর-রুনি হত্যা মামলা দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে প্রকৃত খুনিদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ। 

এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ডিআরইউর স্মারকলিপি আমি র‌্যাবের ডিজিকে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি একটা কিছু যেন তারা জানান, সেই নির্দেশনা তাদের দেওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি, রহস্য উদঘাটনের। সাংবাদিক নেতাদেরও বলেছি, আপনাদের কাছেও যদি কোনো তথ্য থাকে, সেগুলো আমাদের জানালে আমরা সেটিও দেখবো। বিচার তো আমরা করতে পারবো না, আমরা তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারবো। চেষ্টা করছি, অনেক বছর তো হয়ে গেছে। আমরাও চাই এ রহস্য উন্মোচিত হোক। উদীয়মান দুই সাংবাদিক, যাদের অনেক প্রতিভা ছিল, তারা দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। তারা আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছেন। আমরাও চাই কেন এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেটি উদঘাটন করতে।

গত ৫ নভেম্বর সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয় র‌্যাব। সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এই মামলার তদন্তে বিলম্বের বিষয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তদন্তের অগ্রগতি রয়েছে। যখনই আমাদের মামলার তারিখ থাকে, তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে আদালতে আমাদের কিছু প্রতিবেদন দিতে হয়। তদন্তের অগ্রগতির সেই প্রতিবেদন আমরা আদালতে জমা দিয়েছি। সেখানে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত আমরা আদালতে জমা দিয়েছি। আমাদের ফাইন্ডিংস, তথ্য-উপাত্ত, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আমাদের বলেছেন, আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের অবকাশ রয়েছে। যার কারণে আদালত থেকেই আমাদের সময় দেওয়া হচ্ছে। আমরা তদন্তের ক্ষেত্রে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আলামত আমেরিকায় পাঠিয়েছি। ডিএনএ রিপোর্টগুলো আমরা কয়েকদিন আগে হাতে পেয়েছি। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৬০ জন সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ করেছে র‌্যাব। সন্দেহভাজনদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। মামলাটি সরকার, র‌্যাব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সেই প্রতিবেদন জমা দেব।

তদন্তে এই বিলম্বের বিষয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, স্বাভাবিকভাবে অন্য মামলা তদন্তে যে সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে। একটি স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় তদন্ত সংস্থা হয়তো নিখুতভাবে প্রতিবেদন দাখিলে এই সময় নিচ্ছে। যতোটা দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। 

এদিকে সাগর রুনি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ডিআরিইউ। এদিকে শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিউইজে)। সমাবেশ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচর দাবিতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকি অনশন কর্মসূচি শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী।

এদিকে মামলার তদন্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ১১ বছেরেও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলো না। এই সময়ে আলোচিত অনেক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এর মধ্যে হয়েছে। অদশ্য কারণে এই মামলার তদন্ত আটকে আছে। সরকারের কাছে আমাদের পরিবারের দাবি এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য যেন দ্রুত উদঘাটন করা হয়। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ওই বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। সেই থেকে ১১ বছরেও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। 

মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অপর আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ।


আরও খবর