বিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলিমের প্রাণের শহর সৌদি আরবের মক্কা। পবিত্র কাবা শরিফসহ মহানবী স. এর হাজারো স্মৃতি বিজড়িত এই শহর। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম এখানে হজ ও ওমরাহ পালন করতে আসেন। বছরের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ও ভিন্ন ভিন্ন ভাষার এসব মানুষ মক্কায় একত্রিত হয়ে মিশে যান সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনায়। এই বিষয়টিই মক্কাকে বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের শহরে পরিণত করেছে।
মক্কার বেশিরভাগ বাসিন্দাই অনেক ভাষায় কথা বলতে পারদর্শী। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকদের সংস্পর্শে আসার কারণে তারা এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
নন-নেটিভ স্পিকারদের জন্য ইনস্টিটিউট অফ অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ এর ডিন ড. হাসান বুখারি বলেছেন, 'মক্কার অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে সহাবস্থানের একটি অনন্য মডেল এবং সারা বিশ্বের সভ্যতার মিলনের জন্য বিখ্যাত করে তুলেছে।'
বুখারি বলেন, মক্কা একটি সাংস্কৃতিক ইনকিউবেটর হয়ে উঠেছে। কারণ সারা বিশ্ব থেকে মুসলিমরা গ্র্যান্ড মসজিদে (কাবা শরিফ) সারা বছর প্রার্থনা করতে আসেন। শহরের মানুষের সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জ্ঞান ভাগ করে নেন। ডিন বিশ্বাস করেন যে, মক্কায় আসা মুসলিমরা পবিত্র স্থানের সঙ্গে আবেগ দিয়ে জড়িত। তারা আরবি শেখার জন্য উৎসাহ দেখান- কেবল কথা বলার জন্য নয়, ভাষা বোঝার জন্যও। মক্কার লোকেরাও অতিথিদের ভাষা শেখানোর চেষ্টা করেন।
এছাড়াও অনেক বিদেশি অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে মক্কায় বসবাস করেন। সেখানে তারা বিয়ে করেন এবং আরব সমাজের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর বিকাশ ও সমৃদ্ধকরণে অবদান রাখে।
ইন্সটিটিউট অফ রিসার্চ অন হজ অ্যান্ড ওমরাহ এর গবেষণা ও মিডিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান ড. ওসমান বিন বকর কাজ্জাজ বলেন, মক্কার লোকেরা সারাবছরই লাখ লাখ মুসলিমের আগমনের সঙ্গে অভ্যস্ত। আল্লাহর মেহমানদের নিবিড় উপস্থিতি মক্কার জনগণের সঙ্গে, বিশেষত পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া ঘটায়। মক্কার সমাজ এই নতুন সংস্কৃতি গ্রহণ করার জন্য তাদের মন ও হৃদয় খুলে দেয়। যা সমাজকে সমৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক কারণেও অনেকে অনেক ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। মক্কার একজন ব্যক্তি সাধারণত অনেক ভাষা, এমনকি বিভিন্ন আরবি উপভাষাও জানেন।
যেহেতু সারা বিশ্ব থেকে মানুষ হজ এবং ওমরাহ করার জন্য মক্কা এবং মদিনায় আসে, তাই সৌদি আরব কেবল লোকদেরকে অনেক ভাষায় প্রশিক্ষণই দেয়নি বরং দুটি পবিত্র শহরে বিভিন্ন ভাষায় চিহ্নও রেখেছে। অনুবাদকরা সাধারণত ফতোয়া ব্যাখ্যা করেন, দিকনির্দেশনা প্রদান করেন, প্রশ্নের উত্তর দেন, হজের সময় আরাফার দিন থেকে বক্তৃতা দেন, নবী মুহাম্মদের জীবনী এবং পবিত্র কোরআন থেকে বয়ান দেন। মক্কার জনগণ এবং আল্লাহর মেহমানদের মধ্যে এই সাংস্কৃতিক বিনিময় আল্লাহর অতিথিদের মনে মক্কার জনগণের ইতিবাচক প্রভাব ও ভাবমূর্তি বজায় রাখতে অবদান রেখেছে।