সিরাজগঞ্জে
যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি দ্রুত কমছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির
আরও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষ।
রোববার (২৬
জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গত
২৪ ঘণ্টায় ৩২ সেন্টিমিটার কমে শহরের হার্ডপয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে
যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি আরও কমবে।
স্থানীয়রা জানায়,
দুই সপ্তাহ ধরে বন্যার্তদের বাড়িতে পানি ওঠায় অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকতে হচ্ছে তাদের।
তলিয়ে গেছে রান্নার মাটির চুলা, গবাদি পশু রাখার স্থান, টয়লেট, টিউবওয়েলসহ চরাঞ্চলের
নানা ধরনের ফসল ও সবজিক্ষেত। উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য অনেকে চলে গেছে বাড়ি ছেড়ে। বাড়ি-ঘরে
পানি ওঠায় নৌকায় ও মাচায় দিনে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। বন্যার কারণে
আয়-রোজগার বন্ধ তাদের। বন্যাকবলিত এলাকায় শিশুখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দোকান
থেকে অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। বন্যার পানিতে ক্ষেত
তলিয়ে যাওযায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
যমুনা নদীর
সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি, ফুলজোড়, হুড়াসাগর, বড়াল ও চলনবিলেও পানি কমছে।
চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের কিছু বসতবাড়ি এখনও পানি রয়েছে। তবে অধিকাংশ এলাকার বতসবাড়ি
থেকে পানি নেমে গেছে। ফলে বাড়ি ফিরছেন সেখানকার লোকজন। চলতি বন্যায় জেলায় প্রায় সাড়ে
১২ হাজার হেক্টর জমির আমন বীজতলাসহ উঠতি ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক।
শাহজাদপুর উপজেলার
কৈজুড়ী গ্রামের খামারি মুক্তা হোসেন বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমরা নেপিয়ার
ঘাস আবাদ করে গরুকে খাওয়াই। কিন্তু জমি তলিয়ে থাকায় এখন কেনা খাদ্য গরুকে খাওয়ানো ছাড়া
উপায় নেই।
আরেক খামারি
আবুল কালাম বলেন, সবুজ ঘাস গরুকে খাওয়ালে বেশি দুধ হতো। বন্যার পানি আসায় মাঠ তলিয়ে
গেছে। যার কারণে আমাদের খামারের গরুগুলোকে খড়, ভুসি, খৈল, সয়াবিনসহ দানাদার খাবার দিতে
হচ্ছে। ঘাস না খাওয়ার কারণে দুধ কম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,
রাউতারা রিং বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ফসলের মাঠ ও গো-চারণ ভূমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
ঘাসের জমি ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মাঠে নেপিয়ার ঘাসের ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।
জেলা প্রণিসম্পদ
কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার জানান, জেলায় ৯ লাখ গরু, সাড়ে ৩ লাখ ছাগল ও ২ লাখ ভেড়া রয়েছে।
বন্যায় পানি বাড়ায় গোচারণ ভূমি বন্যাকবলিত হওয়ায় কৃষক ও খামারিদের ঘাসের অভাব দেখা
দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে
কৃষক ও খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা
জানায়, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়। ৯
হাজার ১০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, তিল, মরিচ, বাদাম, রোপা আমন, শাক-সবজি, বীজতলাসহ উঠতি
ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে জেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল এলাকার ৮৪টি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।