Logo
শিরোনাম

স্কুল-কলেজ বন্ধ, ক্লাস চলছে শিক্ষকদের কোচিংয়ে

প্রকাশিত:সোমবার ৩১ জানুয়ারী ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৭০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার স্কুল-কলেজে সশরীরে পাঠদান বন্ধ করলেও কোচিং সেন্টারে গাদাগাদি করে বসিয়ে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস ।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটতে থাকায় স্কুল-কলেজে শারীরিক উপস্থিতিতে পাঠদান বন্ধ করা হলেও এর সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির শিক্ষক। সংক্রমণ ঠেকাতে যেখানে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাড়িতে বা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিচ্ছেন তারা।

ঢাকাসহ সারাদেশেই এমন কোচিং ক্লাসের চিত্র দেখেছে জাগো নিউজ। এর মধ্যে ঢাকার শীর্ষস্থানীয় স্কুল-কলেজগুলোর আশপাশের অলিগলিতে শিক্ষকদের এমন কোচিং সেন্টারের আধিক্য দেখা গেছে।

শিক্ষকদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে বলা হচ্ছে। তারা আসছেন। তার বাইরে কেউ যদি কোচিং করান তবে আমাদের কিছু করার থাকে না। যারা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দমন করা উচিত

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুলের শিক্ষকরা অবৈধভাবে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন। এজন্য তারা ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিক ভবনে রুম ভাড়া নিয়েছেন। ছোট ছোট রুমের মধ্যে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাচ করে পড়াচ্ছেন তারা। রুম ছোট হওয়ায় এক বেঞ্চে বসানো হচ্ছে দু-তিনজন। এতে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।

বর্তমানে অনেকের নৈতিকতার জায়গাটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে কাজ করা উচিত, সেখানে তাদের এমন বাণিজ্য মেনে নেওয়া যায় না

ভিকারুননিসার ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষক তারেক আহমেদ ৬৩/২ নম্বর বাড়ির নিচতলার একটি রুমে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন। সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাচ করে ইংরেজি পড়ান। প্রতিটি ব্যাচে ২০-৩০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে পাশের বাড়িতে সাংবাদিক আসার খবরে ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিয়ে তিনি নিজেও কোচিং থেকে বের হয়ে যান।

এ সময় তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারেক আহমেদ কথা না বলেই চলে যান।

শুধু এ শিক্ষক নন। একই গলিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক শিক্ষক ওই এলাকায় কোচিং সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ওই এলাকায় বাইরের অনেক শিক্ষকও কোচিং খুলেছেন। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় সবারই রমরমা অবস্থা চলছে।

পাশেই সিদ্ধেশ্বরীর ৬৮/১ বাড়ির দ্বিতীয় তলার পাঁচটি রুমে সাব্বির, শাহেদ ও রাকিব নামে তিন ব্যক্তি কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ব্যাচভিত্তিক পড়ানো। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী পড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিয়াম তিন বছর ধরে বইগলির ৬৪ নম্বর বাড়ির নিচতলায় সামি স্যারর কোচিংয়ে পড়ে। সামি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোচিং সেন্টার চালান।

ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলার ছোট একটি রুমে উইলসের ১৫ জন শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক আসার অপেক্ষায় কোচিংয়ে বসে রয়েছে। আলাপ হলে জিয়াম বলে, সামি স্যার প্রতি ব্যাচে ২০ থেকে ৩০ জন করে পড়ান। প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে সপ্তাহে তিনদিন করে ক্লাস করান।

এই শিক্ষার্থী বলে, বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকায় স্যার আমাদের টেস্ট পরীক্ষা শুরু করেছেন। আজ আমাদের প্রথম দিনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা রয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও কোচিং নিয়মিত চলছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুননাহার বলেন, শিক্ষকদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে বলা হচ্ছে। তারা আসছেন। তার বাইরে কেউ যদি কোচিং করান তবে আমাদের কিছু করার থাকে না। যারা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দমন করা উচিত।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, কোচিং সেন্টার নিয়ে একটি নীতিমালা রয়েছে। সেটি কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার ওপর জরুরি এ অবস্থায় কোনো সরকারি বা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং করানোর প্রমাণ মিললে দ্রুত সময়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে অনেকের নৈতিকতার জায়গাটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে কাজ করা উচিত, সেখানে তাদের এমন বাণিজ্য মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মনিটরিং করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

নিউজ ট্যাগ: কোচিং সেন্টার

আরও খবর