Logo
শিরোনাম

‘সময়ের প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন, ডামি প্রার্থীতে বাধা নেই’

প্রকাশিত:সোমবার ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | ৩৪৯০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

আওয়ামী লীগ সময়ের প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাই শেখ হাসিনার গাইডলাইন ফলো করে ডামি প্রার্থী হতে বাধা নেই।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ৩৩তম শাহাদাতবার্ষিকীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, দুষ্কর্মের সহযোগী খুঁজে বেড়ায় বিএনপি। হরতাল-অবরোধ ও বোমাবাজি করে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে পারবে না তারা।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন পূরণ হবে না। বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি করে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ তাতে বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস করে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না।

গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। জোট শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলো মিলিয়ে মোট ১০৪টি আসনে নতুন মুখ এসেছে। মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন ২২ নারী। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ৩৪ জন।


আরও খবর



সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বায়ত্তশাসন দাবি সম্পাদকদের

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬৯০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বায়ত্তশাসন দাবি করেছেন দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকগণ। আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এক বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সম্পাদকেরা। এ সময় সাংবাদিকতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা করা হচ্ছে, তা বন্ধের দাবিও করা হয়েছে। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বিটিভি, বিএসএস এবং রেডিও, যেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে সেগুলোকে স্বায়ত্ত শাসন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তারা যেন পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা উৎসুক বাংলাদেশকে সহায়তা করতে।

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক বলেন, আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। সেই সংস্কারের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো, এন্টি করাপশন কমিশন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, নির্বাচন কমিশন এগুলোকে সংস্কার করা। সত্যিকার অর্থে গণমুখী সংস্থা আমরা চাই। নির্বাচন কমিশন যাতে ভবিষ্যতে ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটান, এরকম একটা সংস্থা চাই। আমরা এমন দুর্নীতি দমন কমিশন, তারা যেন স্বাধীন ভাবে দেশের দুর্নীতি দমন করতে পারে।

সাংবাদিকতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সাংবাদিক নিপীড়নের যে অধ্যায়গুলো আছে সেগুলো কার্যত হবে না। এমনটা যাতে ঘোষণা করা হয়। এটা সংস্কারের জন্য ওনারা সময় নিয়ে করতে পারেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিশ্বাস করেন। আমাদেরকে যে বিশেষ আবেদন করেছেন, আমরা যেন আমাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এ সরকারের ভুল ত্রুটি সোচ্চার ভাবে, নির্দ্বিধায় সেটা যেন কাগজে ছাপি। এই সরকারকে সাহায্য করি।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সত্যিকার অর্থে মিডিয়ার স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন। মিডিয়াবান্ধব যদি কোনো সরকারপ্রধান আমরা পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা এখন পেয়েছি। আমরা এর জন্য অত্যন্ত আনন্দিত।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন যে, একটা গ্রুপ করে দেওয়া বা একটা বিশেষ কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের যে পরিবর্তন করা হয়। আমারও সংবিধান সংস্কার চাই। আমরা গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে এগুলো তার সরকারের কোনো পলিসিগত কিছু না।

মাহফুজ আনাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে সেটা সম্পাদকদের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। সে বিষয়ে অনেকের মতামত দিয়েছেন। তবে এই সরকারের মূল অ্যাজেন্ডা কী? সেটার অনুপাতে সময়। ২,৩, ৫বছর, ওনার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই। জাতি কী চায়? জনতা কী চিন্তা করছেন? সেটা তিনি জানতে চান৷ তিনি মিডিয়াকে আহ্বান করেছেন। আমরা যেন জনগণের কথা লিখি।


আরও খবর

শহীদি মার্চে লাখো ছাত্র-জনতার ঢল

বৃহস্পতিবার ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪




ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ আগারওয়ালা গ্রেপ্তার

প্রকাশিত:বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭১০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। পরে সেখান থেকে আগারওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, হত্যা মামলায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডা থানায় মো. শাহাদাত হোসেন খান বাদী হয়ে দিলীপ কুমারের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি গত ২৩ আগস্ট রুজু করা হয়েছে। মামলায় দিলীপ কুমারের বিরুদ্ধে হত্যা ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার ২০ নং আসামি তিনি।

সিআইডির পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থপাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শো-রুমের মাধ্যমে প্রকৃত ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরো প্রকৃত ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি করতেন। এ ছাড়া দুবাই ও সিঙ্গাপুরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে পাচার করেছেন বলে তথ্য রয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।


আরও খবর



ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দীলিপ কুমারের বিরুদ্ধে সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৫৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম মানিলন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নাম মাত্র শোরুমের মাধ্যমে ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরোকে ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি আরও জানান, দীলিপ কুমার আগরওয়ালা দুবাই-সিংগাপুরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে পাওয়ায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান শুরু করেছে।


আরও খবর



রেমিট্যান্স চোরাকারবারিদের পেটে, হুন্ডিতে তছনছ রিজার্ভ!

প্রকাশিত:সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4 | হালনাগাদ:সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4 | ৮৩০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বিগত ১৫ বছরে অবৈধ হুন্ডিতে তছনছ হয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সূত্র বলছে- প্রবাসীদের রক্তে-ঘামে অর্জিত রেমিট্যান্স গেছে চোরাকারবারিদের পেটে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন ডলারের বদলে পাচার হয়ে প্রতিদিন দেশে ঢুকেছে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সেনা। এই সোনার বড় অংশ পুনরায় পাচার হয়েছে দেশের স্থল ও নৌপথে অন্য দেশে। একইভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশে আসছে হাজার হাজার কোটি টাকার হীরা ও হীরাসদৃশ বস্তু। সোনা আর হীরার বৈধ আমদানি নামমাত্র হলেও, চোরাচালানের মাধ্যমে বছরে ৯১ হাজার কোটি টাকা হুন্ডিতে পাচার হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস।

এ পরিস্থিতিতে অংশীজনরা বলছেন, হুন্ডিতে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে নতুন সরকারকে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের অনুসন্ধান ও বিদেশে গোয়েন্দা নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, অব্যাহত ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও  সংকট কাটছে না ডলার সংকট। ফলে ব্যাংকগুলো সময়মতো এলসি খুলতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ডলার সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জ্বালানি খাতে। জ্বালানির মূল্য বাড়ার কারণে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে হুহু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ২২২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে আসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

 এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু  বলেন, অর্থনীতিতে হুন্ডি বড় ফ্যাক্টর। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়েও বেশি আসে হুন্ডিতে। সরকার মুদ্রা মান ম্যানুয়ালি করায় হুন্ডিতে উৎসাহিত হন প্রবাসীরা। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেমিট্যান্সের প্রকৃত প্রতিফলন নেই। রিজার্ভের অর্থ হুন্ডিতে আসার ফলে সোনা চোরাচালানসহ সব ধরনের চোরাকারবারি বেড়ে যায়। এই সংকট উত্তরণে নতুন সরকারকে মুদ্রামান যথাযথ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। কেন ৯১ হাজার কোটি টাকার সোনা ও হীরা চোরাচালান হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের পুনরাবৃত্তি হবে।

 এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ডলারের  ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডিতে বাড়তি দর পাওয়ায় প্রবাসীরা উৎসাহী হন। হুন্ডির সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত। এ চক্রের সঙ্গে আছে  দেশি চোরাকারবারিরা। এদের ধরতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) সক্রিয় হতে হবে। দেশি চক্রকে ধরা বিএফআইইর পক্ষে কঠিন নয়। চোরাচালানে সোনা কীভাবে আসে তা খতিয়ে দেখতে হবে। সোনা চোরাচালান বন্ধে কেন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, সেটাও বেরিয়ে আসবে দেশি চক্রের সদস্যদের ধরতে পারলে। পাচার হওয়া সোনা কীভাবে দেশে আসছে, সেই পথ বন্ধ করতে হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে চোরাচালান বন্ধের বিকল্প নেই।

সর্বশেষ গত ৩ জুন সোনা ও হীরা চোরাচালানে বছরে ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পাচার হওয়ার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বাজুস বলেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত অবস্থিত। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। ভারতে পাচার হওয়া সোনার বড় একটি অংশ এসব জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে থাকে। বাজুসের প্রাথমিক ধারণা- প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, সোনার বার, ব্যবহৃত পুরনো জুয়েলারি (যা ভাঙ্গারি হিসেবে বিবেচিত হয়) ও হীরার অলংকার (ডায়মন্ড জুয়েলারি) চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা তার অধিক। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২২০ কোটি টাকার সোনা ও গয়না এবং ৩০ কোটি টাকার হীরা ও হীরার অলংকার বাংলাদেশে আসছে। সে হিসাবে ৩৬৫ দিন বা এক বছরে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সোনা ও ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার হীরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে। এই পুরো টাকাটাই হুন্ডির মাধ্যমে সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা বিদেশে পাচার করে থাকে। যার ফলে সরকার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে এবং সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। দেশে চলমান ডলার সংকটে প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অর্থ পাচার ও চোরাচালান বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

বাজুস চোরাকারবারিদের ধরতে সুপারিশে বলেছে, সোনা ও হীরা চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। সোনা ও হীরা চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করা জরুরি। বাজুস মনে করে, দেশে অবৈধভাবে আসা সোনা ও হীরার  সিকি ভাগও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আসছে না। ফলে নিরাপদে দেশে আসছে চোরাচালানের বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরার চালান। আবার একইভাবে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ সোনা চোরাচালানের বড় রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি প্রয়োজন।

 দেশে চলমান ডলার সংকট ও অর্থ পাচারের সঙ্গে সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেটের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে সোনার বাজারের অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সব আইন- প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সোনার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আলোচিত জেলাগুলোতে চিরুনি অভিযানের দাবি করছে বাজুস। এ প্রসঙ্গে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) চেয়ারম্যান এম. মাশরুর রিয়াজ বলেন, রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের বেশির ভাগ অর্থই হুন্ডিতে আসে। হুন্ডি বন্ধে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর বাড়াতে হবে। বৈধপথে কীভাবে প্রবাসী আয় তাদের পরিবারের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। এই পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা আসে, সেটা অনেকাংশে কমবে।

 বাজুসের মুখপাত্র ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হুন্ডি বন্ধ করতে চাইলে প্রথমেই সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। এ ছাড়া ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দেশে বড় আকারের বিদেশি সোনা এবং হীরার অলংকার কোথা থেকে কীভাবে আসে, এই সোনার বৈধ উৎস কী, কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে  কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

 বৈদেশিক মুদ্রা ও চোরাচালান বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর  ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে প্রচুর সোনার বার, অলংকার ও হীরা খচিত অলংকার দেশে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে বিমানে কর্মরত কর্মীরাও সম্পৃক্ত থাকার বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া যায়। সাধারণত বিমানবন্দর দিয়ে ছাড় হওয়ার পর কর্মীরা বাস ও ট্রেনযোগে ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে থাকে। সোনা চোরাকারবারিরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সোনার বার আনছে। উদ্বেগজনক তথ্য হলো- গত কয়েক মাসে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী থেকে প্রায় ২৬ কেজি চোরাচালানের সোনা জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৬ কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালে ১০১ দশমিক ৮৯ কোটি টাকার সোনা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিজিবি সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ৯২৫ দশমিক ৯১৯ কেজি চোরাচালানের সোনা জব্দ করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিজিবি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ২৭ দশমিক ৭১৩ কেজি চোরাচালানের সোনা জব্দ করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিজিবির হাতে গ্রেফতার আসামির সংখ্যা ২৯০ জন এবং দায়ের করা মামলার সংখ্যা ২৮৯টি। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য থাকে যে, আসামি ও মামলার পরবর্তী কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গত ১০ বছরে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি, পুলিশ ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি সোনা জব্দ করে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, এই সোনা যদি আনুষ্ঠানিক পথে আমদানি করা হতো তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ জমা হতো, যা থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ হতো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এপিবিএনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এপিবিএন বিগত কয়েক বছরে ১৩১ দশমিক ১১০ কেজি সোনার বার, অলংকার জব্দ করেছে যার বর্তমান বাজারদর ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

 ঢাকা কাস্টমস হাউসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমেই ২০২০ সালে ২ দশমিক ৭৭৫ টন, ২০২১ সালে ২৫ দশমিক ৬৮৯ টন, ২০২২ সালে ৩৫ দশমিক ৭৩৩ টন এবং ২০২৩ সালে ৩১ দশমিক ৪৬৮ টন সোনার বার ব্যাগেজ রুলের আওতায় আমদানি হয়েছে। কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালে শিল্পে ব্যবহারের জন্য ৪টি চালানে ২ কেজি ১৬০ গ্রাম ডায়মন্ড আমদানি করা হয়েছে। তবে ডায়মন্ডের অলংকার আমদানি হয়নি। গত ১৯ বছরে যত ডায়মন্ড আমদানি হয়েছে, তার ৮৭ শতাংশই আনা হয়েছে ভারত থেকে। ভারতের গুজরাটের সুরাটে বিশ্বের ৬৫ শতাংশের বেশি হীরা কাটিং ও পলিশিং করা হয়। খুব সহজে বহন করা যায় বলে দেশটি থেকে অবৈধভাবে হীরা আসছে বলে অনেকের ধারণা।

 বিজিবি জোয়ানরা ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচারের সময় বিগত কয়েক বছরে কয়েকটি চালান জব্দ করেছে। ২০২১ সালে সাতক্ষীরা সীমান্তে পৌনে ২ কোটি টাকার ১৪৪টি হীরার গয়না জব্দ করেছে বিজিবি। ২০১৮ সালে ৭০ লাখ টাকার হীরার গয়না জব্দ করা হয়। অবৈধ পথে হীরা আমদানির বড় কারণ শুল্ক ফাঁকি। হীরা আমদানিতে শুল্ককর অনেক বেশি। যেমন বন্ড সুবিধা ছাড়া অমসৃণ হীরা আমদানিতে কর ৮৯ শতাংশ। মসৃণ হীরা আমদানিতে কর প্রায় ১৫১ শতাংশ। এই শুল্ককর ফাঁকি দিতেই মূলত অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ হীরা আসছে। গত ১৯ বছরে এই মূল্যবান রত্ন আমদানিতে সরকার মাত্র ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। এই হীরার বাজার পুরোটাই চোরাচালান নির্ভর হয়ে আছে। সোনা চোরাচালানের খবর পাওয়া গেলেও, আমরা হীরা চোরাচালানের খবর না পাওয়া রহস্যজনক। হীরা চোরাচালানের সঙ্গে কারা জড়িত, তাও দ্রুত চিহিৃত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাজুস।

 মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ ধারায় সোনা চোরাচালানকে মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। আইনে সেখানে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অপরাধীর মূল হোতা আড়ালে থেকে যায় এবং ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আইনের বেড়াজালে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে চুনোপুঁটির দল। ফলে চোরাচালান চলছে তাদের নিজস্ব গতিতেই। বিগত ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ মন্তব্য করে বলেছেন- জনগণের টাকা আত্মসাৎ, লুটপাট ও পাচারকারীদের স্যুট ডাউন করা উচিত। অর্থ পাচারকারীরা জাতির শত্রু। অর্থ লুটপাট, পাচারের মামলার সামারি ট্রায়াল (দ্রুত বিচার) হওয়া উচিত।


আরও খবর

বাড়ল এলপি গ্যাসের দাম

সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4

এলপিজির দাম আরও বাড়ল

বৃহস্পতিবার ০২ নভেম্বর 2০২3




মুখোশের আড়ালে দিলীপ আগরওয়ালার মাফিয়া সাম্রাজ্য

প্রকাশিত:শনিবার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৭০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

মানবিকতার ফেরিওয়ালা সেজে মুখোশের আড়ালে সোনা চোরাচালানের অপ্রতিরোধ্য নায়ক হয়ে ওঠা দিলীপ আগরওয়ালার উত্থান সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে উঠে আসা সাধারণ দিলীপ আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতা, নারী আর সোনা চোরাচালানকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান। আর এটিকেই নিজের অর্থবিত্ত আর অবৈধ সম্পদের সিঁড়ি বানিয়ে হয়ে ওঠেন অপরাধজগতের বেপরোয়া মাফিয়া। নিজেকে বড় আওয়ামী লীগার পরিচয়ে সভা-সমাবেশে, বক্তব্যে অনিয়ম-দুর্নীতি, মাদক ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে সততার বন্দনা করেছেন অবিরাম।

অথচ আড়ালে ছিলেন অন্ধকারজগতের কারিগর। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের নাম ভাঙিয়ে গত দেড় দশকে গ্রামের সাধারণ দিলীপই হয়ে ওঠেন হাজার কোটি টাকার মালিক।

সরেজমিন চুয়াডাঙ্গা ঘুরে ও তাঁর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যই পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দিলীপ আগরওয়ালার মুখোশের আড়ালের ছবিটি সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানতেন না।

সবার চোখে ধুলা দিয়ে চোরাকারবারির কালো অধ্যায় গড়ে তুলেছেন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগ নেতা দীলিপ কুমার আগরওয়ালা। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বন্ধু ওয়াজ কুরুনি টিটুর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন দিলীপ। ঠিকাদারি ব্যবসায় সুবিধা করতে না পারলেও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে জনরোষের শিকার হয়ে পালিয়ে যান ঢাকায়। সেখানে গিয়ে তাঁর কাকা পবন আগরওয়ালার সঙ্গে সিনেমার কাজ শুরু করেন।

সেই সুবাদে তখনকার উঠতি বয়সী মডেল-নায়িকাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন দিলীপ। সিনেমা ব্যবসার পাশাপাশি রাজধানীতে সোনার দোকান ছিল পবনের। সেই ব্যবসার কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পান দিলীপ। চতুর দিলীপ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিশেই সোনা ব্যবসার গোমর জেনে যান। কৌশলে বাড়তি অর্থ আয়ের পথ খুঁজে বের করেন তিনি।

সীমান্তবর্তী এলাকায় জন্ম নেওয়া দিলীপের চোরকারবারিদের সঙ্গে কৈশোর থেকেই চেনাজানা ছিল। ফলে সহজেই সীমান্তবর্তী চৌগাছা, মহেশপুর ও জীবননগরের বিভিন্ন পয়েন্টের কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছিলেন না দিলীপ। এরপর কৌশল হিসেবে উঠতি বয়সীদের নিয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। যারা বিনিয়োগের জন্য অর্থের সংস্থান করে। সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ধীরে  ধীরে ব্যবসার সম্প্রসারণ করেন তিনি।

সূত্র বলছে, ব্যবসার শুরুতে পবনের দোকান থেকে দুবাই, সিঙ্গাপুর থেকে পাচার হওয়া সোনা সংগ্রহ করতেন ব্যবসায়ীরা। ধীরে ধীরে এই ব্যবসা প্রসার হতে থাকে। ২০০৫ সালের দিকে কৌশলে পবনের প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে গড়ে তোলেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আমলা-মন্ত্রীদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এমনকি তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য উঠতি বয়সী মডেল ও নায়িকাদের ব্যবহার করতে থাকেন। এরপর দিলীপকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্তে গড়ে তোলেন শক্ত সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, যশোরের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহিন চাকলাদার, ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলমসহ কয়েক উপজেলার অন্তত ২৫ জন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ছিলেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। এক পর্যায়ে দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ থেকে অবৈধ পন্থায় সোনা এনে ভারতে পাচার করতে থাকেন। এভাবেই কয়েক বছরের ব্যবধানে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

মানবসেবার গাড়িতে সোনা পাচার

মানবসেবাই ধর্ম স্লোগানে দিলীপ কুমার তাঁর মা তারা দেবীর নামে চুয়াডাঙ্গা শহরে গড়ে তোলেন তারা দেবী ফাউন্ডেশন। কথিত এই মানবিক ফাউন্ডেশন জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন নেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ফাউন্ডেশনের আড়ালে সোনা চোরাচালান করতেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এ জন্য ফাউন্ডেশনের নামে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সও কেনেন। অ্যাম্বুল্যান্সগুলো মাঝেমধ্যে দিনের বেলায় জনসেবার জন্য ব্যবহৃত হলেও রাতে সোনা নিয়ে সীমান্তের দিকে ছুটে চলত বলে জানিয়েছে স্থানীয় অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী জানান, এজাতীয় প্রতিষ্ঠান অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কিভাবে চলছে, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ রকম শত শত প্রতিষ্ঠান মানবিক কর্মকাণ্ডের নামে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশিদ বলেন, তারা দেবী ফাউন্ডেশনের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এমনকি ওই নামের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদনও করা হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছাত্রজীবনে অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির ছিল দিলীপ। সে সময় তার পারিবারিক সচ্ছলতা ছিল না। তার বাবা একটি সিনেমা হল পরিচালনা করতেন। হঠাৎ করেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যায় সে। বছর দুয়েক আগে লোকমুখে শুনি দিলীপ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। শুনে আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। পরে জানতে পারলাম সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে সে। এখন এলাকায় এসে সততার মুখোশ পরে মানবিক কাজকর্ম করে দানবীর হতে চাচ্ছে।

দিলীপের স্কুলজীবনের সহপাঠী শহিদুল ইসলাম বলেন, দিলীপ পড়ালেখায় তেমন ভালো ছিল না। টেনেটুনে ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত পড়েছিল। অভাব-অনটনে পড়ে নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে ঢাকায় চলে যায়। সে সময় এলাকায় আসত না দিলীপ। হঠাৎ ২০০৯ কিংবা ২০১০ সালের দিকে দামি গাড়িতে করে এলাকায় আসে। তখন তার মুখ থেকেই শুনলাম সে নাকি আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয়েছে। বড় বড় মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে মোবাইল ফোনে ছবি দেখাল।

তিনি আরো বলেন, পরে জানতে পারি, দিলীপ সোনা চোরাকারবারে জড়িয়ে এত অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। এলাকায় তারা দেবী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছে। শুনেছি ওই প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে অবৈধ সোনা চোরাচালান করে থাকে দিলীপ।


আরও খবর

১৫ বছরে ভুয়া কাগজে ব্যাংক লুট

বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪