সন্তান যদি বাবা-মায়ের
কথা না শোনে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে কী করবেন তা নিয়েই আলোচনা করা হল এখানে। অনেক সময়
বাচ্চারা বড়দের কথা শুনতে চায় না। তখন বকাবকি না করে চেষ্টা করুন ভালো ভাবে তাকে বুঝিয়ে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। কেন বড়দের কথা শোনা উচিত, সেটা বুঝিয়ে বলুন আপনার সন্তানকে।
সন্তান যে সময়
বড় হয়ে ওঠে, সেই সময় তার মধ্য়ে নানা ব্যবহারগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই সময় তার
কোনও কোনও আচরণ বাবা-মা হিসেবে আপনাদের পছন্দ না-ই হতে পারে। কিন্তু তা বলে তাকে বকাঝকা
করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। বরং সন্তানের এই বড় হয় ওঠার সময় তার বুঝে তার
পাশে থাকা প্রয়োজন।
ছোট বাচ্চাদের
মধ্যে বেশিরভাগ সময়েই ভালো ও খারাপের বোধ গড়ে ওঠে না। তাই ঘরের চারদিকে অকারণে দৌড়ে
বেড়ানো বা বাড়িতে বড়রা দরকারি আলোচনা করার সময় হই-হট্টগোল করা বাচ্চাদের খুবই স্বাভাবিক
আচরণ। অনেক সময় জিনিসপত্র ছোড়া এমনকি কাউকে মারধর করার স্বভাবও দেখা দেয় কোনও কোনও
বাচ্চার মধ্যে। এরকম সময়ে বারণ করলেও তারা শুনতে চায় না। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
আনা বাবা-মায়ের পক্ষে সত্যিই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে ওঠে।
এই মিথ্যে কখনোই
বলবেন না সন্তানকে:
পড়াশোনার প্রতি
বাচ্চাদের রুচি বাড়ানোর জন্য আমরা প্রত্যেকেই বলে থাকি যে, ‘আমি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলাম।’ কিন্তু
এটি সত্যি হলেই এমন কথা বলুন তাদের। এমন কোনও মিথ্যে নিজের সন্তানকে বলবেন না, যা একদিন
তার সামনে ধরা পড়ে যেতে পারে। পরিবারের সদস্য বা বন্ধুবান্ধবরা আপনার গোপন সত্যটি
সন্তানের সামনে ফাঁস দিতে পারেন। অথবা এ-ও হতে পারে, আপনার রেজাল্ট সন্তান দেখে ফেলল।
তখন তাদের কাছে কিছুই লুকানো থাকবে না।
বাচ্চার ওপর প্রভাব:
আপনার মিথ্যে
ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা আপনাকে মিথ্যাবাদী মনে করতে শুরু করবে। আবার আপনার কোনও
কথাকেই বিশ্বাস করতে পারবে না। তখন পড়াশোনায় রূচি বাড়ানোর জন্য আপনার প্রচেষ্টাও
বিফল হতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের দেখাদেখি বাচ্চারা মিথ্যা কথা বলাকে স্বাভাবিক
মনে করতে পারে।
বাচ্চাদের ভুল
করা থেকে আটকানোর জন্য, খাওয়ানো বা ঘুম পাড়ানোর সময় অনেকেই অনেক রকমের ভয় দেখিয়ে থাকি।
তার মধ্যে অন্যতম হল জুজুবুড়ি বা শ্যাওড়া গাছের পেত্নীর ভয় দেখিয়ে তাদের দিয়ে কাজ
হাসিল করানো।
বাচ্চাদের ভুল
কাজ করা থেকে আটকাতে হলে, তাদের বোঝান যে সেই কাজের কেমন প্রভাব পড়তে পারে। কখনও কোনও
কাল্পনিক চরিত্র দাঁড় করিয়ে তাদের ভয় দেখাবেন না। এর ফলে বাচ্চার মনে ভয় দানা বাঁধে।
অন্তর থেকে দুর্বল হতে শুরু করে তারা।
একটি শিশুর বড়দের
কথা না শোনার অভ্যেসের পেছনে একাধিক বিষয় কাজ করতে পারে। এর মধ্য়ে অনেকটাই নির্ভর করে
বাবা-মায়ের উপর। অনেক সময় এখনকার দিনে বাবা ও মা দুজনেই নিজেদের পেশাগত জীবন নিয়ে এত
বেশি ব্যস্ত থাকেন যে সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর
সময় তাঁরা ভুলে যান যে তাঁরা একটি ছোট শিশুর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং শিশুর সঙ্গে শিশুর
মতোই আচরণ করা জরুরি। আগেকার দিনে সন্তান ভুল করলে তাকে কড়া ভাবে শাসন করার রীতি ছিল।
শাসনের ভয়ে সন্তান আর ভুল কাজ করবে না বলে মনে করা হত। তবে পেরেন্টিং স্টাইল এখন বদলেছে
অনেকটাই। সন্তানকে শাসন করার বদলে তাকে ভালো করে সময় নিয়ে খারাপ ও ভালোর মধ্যে পার্থক্য
করতে শেখান।
সন্তান যদি আপনার
কথা না শোনে তাহলে কী করবেন?
* সন্তান কথা
না শুনলে তার সঙ্গে তার বয়সের মতো করেই মিশুন। ঠিক বাচ্চার মতো করেই তার সঙ্গে কথা
বলে বোঝার চেষ্টা করুন, কেন সে কথা শুনতে চাইছে না। বন্ধুর মতো করে কথা বললে সন্তান
আপনার কাছে তার মনের কথা বলবে।
* সন্তানের সঙ্গে
কথা বলার সময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। কথা বলার সময় আই কনট্যাক্ট খুবই জরুরি।
এতে আপনার প্রতি আস্থা তৈরি হবে সন্তানের মনে।
* সন্তানের সঙ্গে
কথা বলার সময় মাথা গরম করে ফেলবেন না। এতে সন্তান হয় ভয় পাবে, নয়তো বিরক্ত হবে।
* সন্তান আপনার
কথায় ভয় পেয়ে গেলে হাসি-মজা করে পরিস্থিতি হালকা করে দিন।