
সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে এক দিনের
ব্যবধানে সরে এল জাতীয় পার্টি। দলটি গতকাল রোববার জানিয়েছিল, রওশন এরশাদের পরিবর্তে
জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারের সিদ্ধান্ত চায়। এ দাবি না মানা
পর্যন্ত আর সংসদে যাবে না। আজ সোমবার আবার সেই সিদ্ধান্ত পাল্টেছে দলটি। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে
দলটি জানিয়েছে, স্পিকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সংসদ
অধিবেশনে যোগ দেবেন।
রওশন এরশাদকে সরিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করতে গত ৩ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন
চৌধুরীর কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। সাধারণত, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ
সদস্য কোনো সিদ্ধান্ত নিলে স্পিকার সেটি অনুমোদন করেন। কিন্তু প্রায় দুই মাস হতে চললেও
জাপার চিঠির বিষয়ে স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের
একটি সূত্র গতকাল জানায়, সংসদের বৈঠক শেষে গতকাল সন্ধ্যায় স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর
সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। সেখানে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার
বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চান তাঁরা। আলোচনায় তাঁরা ধারণা পেয়েছেন,
এ বিষয়ে স্পিকারের কাছ থেকে শিগগিরই ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে
জাতীয় পার্টির সদস্যরা আর সংসদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে গতকাল বিকেলে জাতীয় পার্টির সংসদীয়
দলের বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রওশন এরশাদের বদলে
জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়টি সোমবার (আজ) জাতীয় সংসদে তুলবেন
তাঁরা। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমানকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টিও
তুলে ধরা হবে।
চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন
গতকাল শুরু হয়। এই অধিবেশন চলবে আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। গতকালের অধিবেশনে জাতীয় পার্টি
অংশ নেয়। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ চার সংসদ সদস্য সংসদে শোক প্রস্তাবের
আলোচনায় বক্তব্যও দেন। তবে পরে সংসদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
তবে আজ জাতীয় পার্টির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদের
মাননীয় স্পিকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দেবেন জাতীয় পার্টির
সংসদ সদস্যরা। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম)
কাদের আজ (সোমবার) এক নির্দেশনায় জাতীয় পার্টির সকল সংসদ সদস্যকে অধিবেশনে যোগ দিতে
নির্দেশ দিয়েছেন।’
একাদশ জাতীয় সংসদের শুরু থেকে বিরোধীদলীয়
নেতার দায়িত্ব পালন করছেন জাপার ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ পদে থাকা রওশন
এরশাদ। কিন্তু ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন হঠাৎ ৩০ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান
করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর পরদিনই জাপার সংসদীয় দলের সদস্যরা
বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরিয়ে এই পদে জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত
নেন।
দলের ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে রওশন এরশাদ
ও তাঁর ছেলে সাদ এরশাদ ছাড়া বাকি ২৪ জনই এই সিদ্ধান্তে একমত হন। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে
স্পিকারকে জানায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হকের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধিদল। এরপর
৩ সেপ্টেম্বর বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান এ বিষয়ে লিখিত
আবেদন স্পিকারের কার্যালয়ে জমা দেন।
পরে অবশ্য মসিউর তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে
আসেন এবং স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে জাপার সংসদীয় দলের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
চান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসিউরকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জাপা।
এমনকি দলের দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।