সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে আজ সোমবার ইউনিয়ন
পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সপ্তম ধাপের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা
পর্যন্ত ২০ জেলার ২৪ উপজেলার ১৩৮টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ৯টি ইউপির ভোট নেওয়া
হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
আগের ধাপের নির্বাচনগুলোর মতো এই ধাপের
নির্বাচন নিয়েও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা।
অনেক নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ভোটাররা
ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আগের ধাপের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতার
ঘটনায় ‘অস্বস্তি’ ও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী
দিনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে এই ধাপে
ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। অনিয়ম
বা রাতের ভোট এড়াতে এই ধাপে ব্যালট পেপার আজ সকালে কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে
ইসি।
এ ছাড়া আগের ধাপগুলোর মতো এবারও বিনা ভোটে
জনপ্রতিনিধি হওয়ার ঘটনা এড়ানো যায়নি। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন
৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১ জন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য
পদে ১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৭ প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এবারের
ইউপি নির্বাচনে ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্বাচন কমিশন অনেকটা অসহায়। প্রতিটি ধাপের
ভোটের দিন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ভোট সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ১১৩ জনের প্রাণহানি
ঘটেছে। আহত হয়েছে সাত শতাধিক।
ইসি সূত্র জানায়, এই ধাপের নির্বাচনে মোট
ভোটার রয়েছেন ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৮৬ জন,
নারী ভোটার ১১ লাখ ৯৪ হাজার ২২৯ জন। এ ছাড়া তিনজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ভোটকেন্দ্র
রয়েছে এক হাজার ৩৫০টি। ভোটকক্ষ রয়েছে সাত হাজার ৮৫টি। এই ধাপে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন পাঁচ হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭৬ জন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত
ওয়ার্ডের সদস্য পদে এক হাজার ২৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে চার হাজার ৬২ জন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনী এলাকায় এরই মধ্যে মোটরসাইকেল
চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত শনিবার দিনগত রাত ১২টা থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা
পর্যন্ত ৫৪ ঘণ্টার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এ ছাড়া গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে
এসব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাও বন্ধ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব,
পুলিশ ও আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছেন।
তাঁরা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী
ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
চলমান ইউপি নির্বাচনে এরই মধ্যে ছয় ধাপের
ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের দুই দফায় ৩৬৫টি এবং ১১
নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া ২৮ নভেম্বর
তৃতীয় ধাপে এক হাজার ইউপিতে এবং চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ৮৩৬ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা
হয়। পঞ্চম ধাপে গত ৫ জানুয়ারি ৭০৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে ২১৮
ইউপিতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। আজ সপ্তম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন
কমিশনের অধীনে ইউপি নির্বাচন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন তাদের মেয়াদ
শেষ হওয়ার চার দিন আগে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি অষ্টম ধাপে আরো আটটি ইউপির নির্বাচনী তফসিল
ঘোষণা করে রেখেছে।