সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর দুর্ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী তিন লাখ টাকা সহায়তা পাবেন। এসব বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বিধিমালা জারি করা হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর এ বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সড়ক পরিবহন আইনটি হয়েছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আর এ আইন হওয়ার চার বছরের বেশি সময় পর হলো বিধিমালা।
আইনটি আগে হলেও
ক্ষতিপূরণসহ বেশ কিছু বিষয়ের কোনো কার্যকারিতা ছিল না এর বিধিমালার অভাবে। এই বিধিমালা
এখন দ্রুতই কার্যকর হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী,
চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া
হবে ৩ লাখ টাকা। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ
হবে এক লাখ টাকা।
ক্ষতিপূরণের দাবিগুলো
১২ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।
আর্থিক সহায়তা
পাওয়ার জন্য ফরম অনুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের
চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন
দাখিল করার তারিখ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বোর্ডের চেয়ারম্যান অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন।
এই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অনুসন্ধান
করে প্রতিবেদন বোর্ডের কাছে দেবে।
প্রতিবেদন দাখিলের
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদন মঞ্জুরপূর্বক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা
গ্রহণ করবে। বিআরটিএর চেয়ারম্যান এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন। আর্থিক সহায়তার টাকা
আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে ‘প্রাপকের হিসাবে
প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে দিতে হবে।
এ ছাড়া বিধিমালায়
বলা আছে, আর্থিক সহায়তার জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল থাকবে এবং এই তহবিলে মোটরযান মালিক
প্রতিটি মোটরযানে বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা দেবেন। এ তহবিল
গঠনে মোটরসাইকেলের মালিককে এককালীন ১০০০ টাকা দিতে হবে। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভারের জন্য
বার্ষিক দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। মিনিবাস, মিনি ট্রাক ও পিকআপের জন্য বার্ষিক ৭৫০
টাকা ধার্য হয়েছে। কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য বার্ষিক ৫০০ টাকা দিতে হবে। আর থ্রি-হুইলার ও অন্যদের বার্ষিক
৩০০ টাকা দিতে হবে।
মোটরসাইকেল ছাড়া
অন্যান্য যানের চাঁদা দেওয়ার নির্দিষ্ট মেয়াদ চলে গেলে প্রতি মাস বা মাসের অংশবিশেষের
জন্য ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
তবে সরকারের পূর্ব
অনুমোদন নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড প্রয়োজনে সময়-সময় এই চাঁদার পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারবে।
বিধিমালা অনুসারে
প্রতিটি চালকের লাইসেন্সের জন্য ১২ ‘দোষসূচক পয়েন্ট’ থাকবে। সড়ক পরিবহনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের
কারণে এক বা দুটি পয়েন্ট কেটে নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। যদি একজন চালক সব পয়েন্ট হারান
তবে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
২০ বছরের নিচে
কেউ যানবাহনের কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্স পাবেন না। আর এই লাইসেন্স পেতে
হলে কন্ডাক্টরকে অবশ্যই পঞ্চম শ্রেণি ও সুপারভাইজারকে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে।