যৌতুকের দাবিতে
স্ত্রীকে হত্যা করে পলাতক ছিলেন ১৬ বছর। এরই মধ্যে আবার বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস
করতে থাকা ওই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পলাতক থাকা উজ্জ্বল প্রামাণিককে (৪০) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। অবশেষে
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার
(৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ
সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাব-৩ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
ঘটনার বিবরণে
তিনি জানান, বগুড়া সদর থানাধীন কৈচড় দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল প্রামাণিকের
সঙ্গে ২০০৬ সালের জুন মাসে ভিকটিম আলো বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দিন উজ্জ্বল
এবং তার পরিবারকে নগদ ৩০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। বিয়ের পর বিদেশ যাওয়ার জন্য স্ত্রীর
কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন উজ্জ্বল।
এ অবস্থায় পারিবারিক
সালিশে যৌতুক বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। টাকা দিতে
অস্বীকৃতি জানালে উজ্জ্বল প্রামাণিক এবং তার পরিবার আলো বেগমকে তালাক দেবে বলে ভয়ভীতি
দেখাতে থাকে। উজ্জ্বল এবং তার পরিবার ভিকটিম আলো বেগমকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক
নির্যাতন চালায়।
২০০৬ সালের ১
আগস্ট উজ্জ্বলের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবু ভিকটিম আলো বেগমের পরিবারকে ফোনে জানান,
আলো বেগম গুরুতর অসুস্থ। এরপর ভিকটিমের পরিবারের লোকজন উজ্জ্বলের বাড়িতে গিয়ে ঘরের
মেঝেতে আলো বেগমের লাশ দেখতে পান।
এ ঘটনায় উজ্জ্বল
প্রামাণিককে প্রধান আসামি করে ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আসামি
উজ্জ্বল প্রামাণিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৪ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
দেন আদালত। অন্য ৪ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
র্যাব কর্মকর্তা
বলেন, স্ত্রীকে হত্যার পর উজ্জ্বল প্রামাণিক তার মা আলেয়া বেওয়াকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে
পালিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এসে পরিচয় গোপন রেখে বসবাস শুরু করেন। ছয় মাস পর নাছিমা
খাতুন নামে একজনকে বিয়ে করে গাজীপুরে বসবাস করে আসছিলেন।
তাদের ১০ বছর
এবং ৩ বছর বয়সী ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে। উজ্জ্বল পালিয়ে আসার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত
বগুড়ায় নিজ বাড়ি এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে গাজীপুরে
আত্মগোপনে ছিলেন।
কিছুদিন আগে তিনি
এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আশুলিয়ায়
সপরিবারে একটি ভাড়া বাসায় আত্মগোপন করে বসবাস শুরু করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আশুলিয়ায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করা হয়।