জবি থেকে মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ:
তারুণ্য নির্ভর আমাদের এ সমাজে বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ইন্টারনেটের প্রসারের কারণে তরুণরা খুব সহজেই তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদেরকে তরুণদের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তেমনই একজন ইয়ুথ লিডার এবাদুল ইসলাম। কাজ করে যাচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের শিক্ষা নিয়ে। 'জ্ঞান অর্জন ও বিস্তার' এ শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠা করেছেন তারুণ্য নির্ভর সেচ্ছাসেবী সংগঠন 'পাঠশালা'।
সময়টা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস। কয়েকজন কোমল মতি শিশুদের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারটা স্বেচ্ছাসেবক কয়েকজন তরুণের ভালোলাগেনি। যখন এই কোমল মতি শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সেই সময় তারা স্কুলে না গিয়ে কাজ করছে কিংবা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন এভাবে বসে থাকা যাবে না। এই শিশুদের জন্য কিছু একটা করা উচিত। পরে দৃঢ়চেতা এই তরুণরা সিদ্ধান্ত নিলো সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করবে একটি সংগঠন। সেই থেকে শুরু হয় 'পাঠশালা'। পথশিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করায় সংগঠনটির নামকরণ করা হলো 'পাঠশালা'। সেই থেকে শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, সেই তরুণদের হাত ধরেই গড়ে উঠা সংগঠন আজ সারা বাংলাদেশের কয়েক হাজার তরুণের সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
পাঠশালা সৃষ্টির লগ্ন থেকেই সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরণে অবিচল ছুটে চলেছে সারা দেশের একঝাঁক তরুণ। এ পর্যন্ত সারা দেশে বেশ কিছু কার্যক্রম চালিয়েছে পাঠশালা। পাঠশালা প্রতিষ্ঠার পর থেকে পথশিশুদের পড়ালেখাসহ এ পর্যন্ত নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুরে খাবার বিতরণ, শিক্ষা সামগ্রী বিতরণসহ নানামুখী কর্মসূচি করেছেন তারা। পথশিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করতে বিশেষ প্রোগ্রাম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা, রাজশাহীর কাজলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা, ফরিদপুর ইন্জিনিয়ারিং কলেজে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা, ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং তাদের খাবার সহ শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, রাজশাহীর রেলওয়ে কলোনি মাঠে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং খাবার ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় এসএসসির কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে উপহার দেয়া। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে রাজশাহী এবং বগুড়ায় করোনার করাল গ্রাসে দিশেহারা অসহায় কর্মহীন মানুষের মাঝে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। দেশের ২০ টির বেশি জেলায় একযোগে সার্ভে করা হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে যাতে তারা শিক্ষার দিকে আরও ধাবিত হয়, বর্তমানে পাঠশালার মেগা ইভেন্ট স্কিল ডেভলপমেন্ট ট্রেনিং সেশন চলছে যেখানে সারা দেশের তরুনরা তাদের নানা ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে। এছাড়াও সারা দেশে পাঠশালা ছোট বড় আরও অনেক প্রোগ্রাম করেছে। পাঠশালা কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সারাদেশে বর্তমানে ১১ টি শাখা কমিটি সচল রয়েছে, এছাড়াও বেশ কয়েকটি কমিটি প্রস্তাবিত রয়েছে। সারা দেশে পাঠশালার রয়েছে একঝাঁক ক্যাম্পাস এম্বাসেডর, রয়েছে ক্রিয়েটিভ ফ্যাকাল্টি, আইটি সেল, প্রোগ্রাম অর্গানাইজিং সেল। বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার রেজিস্টারকৃত সদস্য নিয়ে এগিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পাঠশালা।
পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা এবাদুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সাল থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করা পাঠশালা এই স্বল্প সময়ে সমাজে অনেক বড় বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমে আশেপাশের এলাকায় সার্ভে করে কিছু সংখ্যক সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সামগ্রী এবং খাবার বিতরণ করে পাঠশালা। যা থেকে অনুপ্রেরণিত হয়ে সে সকল সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা, পড়াশোনার উপর মনোযোগী হয়। তাদের পিতামাতারা শিশু শ্রমে না দিয়ে পড়ালেখার জন্য পাঠশালায় পাঠায়। পাঠশালার মধ্যে দিয়ে বস্তি এলাকার আশেপাশের অনেক সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সুযোগ করে দিয়েছে পাঠশালা। পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সারা দেশে কাজ করে যাচ্ছে পাঠশালা। সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছে পাঠশালার একঝাঁক তরুণ-তরুণী।