সুনামগঞ্জ থেকে জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রাম নোয়াগাঁও হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলামকে মৌলভীবাজারে বদলি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) রাতে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে সুনামগঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত নূর আলমকে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমনার বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শাল্লা থানা ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত ও দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে মৌলভীবাজারে বদলি করা হয়েছে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছিলো।
এ ব্যাপারে সিলেট পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শাল্লা উপজেলায় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলার ঘটনায় শাল্লার থানার ওসি ও দিরাই থানার ওসির দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গিয়েছে সেজন্য শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামে মৌলভীবাজার জেলায় বদলী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হককে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের গোপেন্দ্র দাসের ছেলে ঝুটন দাস আপন।
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ সেই রাতে শশখাই বাজার থেকে ঝুটন দাসকে আটক করে। পরদিন, ১৭ মার্চ সকালে উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ১৮ মার্চ সকালে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই দিন বিকালে বাড়ি ঘরে হামলার বিষয়ে পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা দেড় সহস্রাধিকজনকে আসামী করা হয়েছে। অন্য মামলার বাদী স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০০জনকে আসামী করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯ মার্চ গভীর রাতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানা এলাকা থেকে আত্বগোপনে থাকা শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও নোয়াগাও গ্রামের সংখ্যালঘুদের গ্রামে হামলার ঘটনায় ১৮ মার্চ দুটি ও ২২ মার্চ আরেকটি মামলা হয়। ১৮ মার্চ করা দুটি মামলার একটির বাদী শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। ২২ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন শাল্লা থানার এসআই আবদুল করিম। এদিকে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় আদালতে ৭২জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছেন নিভা রানী দাস। তিনি ঐ গ্রামের বাসিন্দা ও মাওলানা মামুনুল হক কে কটুক্তি করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আসামী ঝুমন দাস আপনের মা। মামলায় আসামি করা হয়েছে শহীদুল ইসলাম স্বাধীন মেম্বার সহ ৭২ জন ও অজ্ঞাত ২ হাজার। বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) আমল গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট শাল্লা জোন আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।