দুর্গাপূজার পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় আচার শ্যামাপূজা আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর)। এবার দুর্গাপূজায়
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে শ্যামাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ দীপাবলী
উদযাপন করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন,
সারাদেশে দুর্গাপূজা ঘিরে যে নারকীয় তাণ্ডব সংঘটিত হয়েছে, এতে করে উৎসব করে পূজা করার
মতো মানসিক পরিস্থিতি নেই। তবে পূজা যথানিয়মেই হবে। যেসব মন্দিরের প্রতিমা ভেঙে ফেলা
হয়েছে, সেসব মন্দিরে ঘটপূজা চলবে।
সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী
নামের উৎপত্তি। হিন্দু পুরাণ মতে, দেবী দুর্গারই একটি শক্তিরূপ কালী। কালীপূজা তাই
হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে
কালীপূজার মাহাত্ম্য। দেবী কালী অবশ্য তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা,
চামুণ্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। কার্তিক মাসের অমবস্যা তিথিতে
তার বন্দনাতেই এই শ্যামাপূজা বা কালীপূজা হয়ে থাকে। এবার তিথি মেনে বৃহস্পতিবার (৪
নভেম্বর) মন্দিরে মন্দিরে হবে কালিপূজা।
রাজধানীর রমনা কালী মন্দির পরিচালনা পরিষদের
সভাপতি উৎপল সাহা বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে পুরনো রমনা কালী মন্দির। নামেই
কালী মন্দির, তাই এখানে পূজা তো করতেই হবে। আমাদের আয়োজনে কমতি নেই। তবে এবার দুর্গাপূজার
সময়ে যে সহিংসতা আমরা দেশের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে দেখেছি, তাতে ভীষণ রকম ব্যথিত হয়েছি।
আমরা মনে করি, এ দেশে সম্প্রীতির দেশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে
না বলেই আশা করি।
উৎপল সাহা বলেন, এবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার
কারণেই আমরা কালীপূজা করলেও দীপাবলীর আয়োজন স্থগিত রাখছি।
কালীপূজার দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে
বাড়িতে ও শ্মশানে সন্ধ্যা থেকেই প্রদীপ জ্বালানো হয়। এর মধ্য দিয়ে তারা স্বর্গীয় পিতা-মাতা
ও আত্মীয়-স্বজনদেরও স্মরণ করেন। এই আনুষ্ঠানিকতাকে বলা হয় দীপাবলী। তবে এবার দুর্গাপূজায়
দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিসংতার কারণে এই দীপাবলীর উৎসব থেকে সরে এসেছেন আয়োজকরা।
বাংলাদেশে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ
সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, আমাদের এখনো ভয় কাটেনি। যদিও সরকার সহিংসতায়
ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কী
করে মুছে ফেলা সম্ভব!
তিনি বলেন, মায়ের পূজা তো করতেই হবে, সে
যত বাধাই থাকুক। আমরা আমাদের মতো করে আয়োজন করব। তবে দীপাবলীর উৎসবটা আমরা সহিংসতার
প্রতিবাদ হিসেবে বর্জন করেছি। পূজার দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আমরা
দেশের সব মন্দিরের সামনে প্রতিবাদ জানাব। কালো কাপড় মুখে বেঁধে মন্দিরের সামনে ১৫ মিনিট
অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
নির্মল চ্যাটার্জি আরও বলেন, আমরা মনে
করি যারা সহিংসতা ঘটিয়েছে তারা আবারও এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। সে আশঙ্কা থেকেই সবাইকে
সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কালী শ্মশানের
অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এ কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহা ধুমধাম করে শ্মশান কালীপূজা
অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, সিদ্বেশ্বরী কালী
মন্দিরসহ বিভিন্ন মণ্ডপ ও মন্দিরেও শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।