Logo
শিরোনাম

তিনি বেঁচে আছেন মনের মণিকোঠায়

প্রকাশিত:সোমবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ৯১৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটি ও মানুষের পরম প্রিয়জন আলহাজ শেখ আবুল বাশারের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বেসরকারি এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে সেদিন নাজিরপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তার প্রয়াণে জন্মদাত্রী নাজিরপুর হারিয়েছিল তার প্রিয় সন্তানটিকে। সেদিন এই কৃতীসন্তানের শোকে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষের গগণবিদারী আহাজারিতে বাকরুদ্ধ হয়েছিল আপামর জনতা।

আলহাজ শেখ আবুল বাশার ছিলেন একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন গণমানুষের অতি কাছের এবং গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের পরম বন্ধু। আলহাজ শেখ আবুল বাশার আমৃত্যু নাজিরপুরের মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়ে গেছেন। নীতি-নৈতিকতা ছিল তার অনন্য সম্পদ। সাধারণ জনগণ ছিল তার পরম আত্মার আত্মীয়। তিনি জয় করেছেন তাদের মন। বাঙালির সম্মান, গৌরব ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে যেসব রাজনীতিবিদ নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তাদের অন্যতম আলহাজ শেখ আবুল বাশার। বিভিন্ন সময় নাজিরপুরে আন্দোলন-সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন তিনি।

তিনি নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিপারে নির্মমভাবে হত্যার পর ওইদিনই তার নেতৃত্বে নাজিরপুরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিলো। আর এ কারণে তাকে মামলা-হামলার শিকারও হতে হয়েছিলো। এছাড়া ৭৫-পরবর্তী নাজিরপুরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পাশাপাশি নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সবশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

একজন সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিক ও সমাজসেবকের যেসব গুণ থাকা উচিত তার সবই আলহাজ শেখ আবুল বাশারের মধ্যে ছিল। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন দেশপ্রেমিক, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথের একজন দক্ষকর্মী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলা বিনির্মাণ ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য।

দেশ ও মানবকল্যাণে নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে মানুষ তার স্বীয় মহিমার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ ধরণীর বুকে অমরত্ব লাভ করে। ত্যাগই আলোকিত মানুষের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ। একমাত্র ত্যাগের মাধ্যমেই মানবজীবনকে সার্থক করা সম্ভব। মানুষ যদি অন্যের কল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উজাড় করে দেয়, তাতেই তার চরিত্রে মহত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। আর এমনই একজন সজ্জন ত্যাগী ব্যক্তি ছিলেন আলহাজ শেখ আবুল বাশার।

কোনো ধরনের পদ-পদবির লোভ-লালসা তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তার কর্মের মধ্য দিয়ে।

আলহাজ শেখ আবুল বাশার রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক ও সমাজ জীবনে আচার-আচরণ ছিল অনুকরণীয়। তার কাছে রাজনীতি ছিল বৃহত্তর মানবকল্যাণের মাধ্যম। মমত্ববোধ, মৈত্রী ও সমঝোতার অন্বেষণে তার প্রয়াস ছিল অক্লান্ত। সাংঘর্ষিক ও সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছিল দৃঢ়, অথচ নম্র ও শান্ত। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, তবুও তিনি আমাদের অন্তরে চিরজাগ্রত। আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, তার স্মৃতি, অর্থপূর্ণ জীবন ও মূল্যবোধ। তার আদর্শ অন্তরে ধারণ করে প্রতিনিয়ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের পথ চলতে হবে। তার মতো ত্যাগী নেতার আজ বড়ই প্রয়োজন। তিনি সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে গেছেন।

তার সঞ্চয় ছিল সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে গণমানুষের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। সেবার দ্বারা ও মহৎ কর্মের মাধ্যমে আলোর প্রদীপ হাতে নিয়ে যে মানুষটি অবদান রেখেছিলেন সংগ্রাম-আন্দোলনে, সে মানুষটি আজ তার নিজগ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত। আলহাজ শেখ আবুল বাশার প্রমাণ করেছেন মানুষকে ভালোবাসলে, তাদের জন্য কাজ করলে মানুষ ভালোবাসার প্রতিদান দেয়। তাই তো মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে আছেন আমাদের মনের মণিকোঠায়। তিনি আজ আরো দীপ্তিময়, আরো বেশি জনপ্রিয়। কিছু ব্যক্তি আছেন যারা মরে গেলেও কর্মময় জীবন তাদের অমরত্ব দান করে। পৃথিবী ও সভ্যতা যাদের দানে হয় সমৃদ্ধ তেমন একজন ক্ষণজন্মা ছিলেন আলহাজ শেখ আবুল বাশার।


আরও খবর