আলোচিত ধর্মীও বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের বাল্যবন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফ চাকরি হারিয়েছেন। ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গী সিয়ামের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে ৮দিন আত্মগোপনে ছিলেন বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনার জেরে সিয়ামকে চাকরিচ্যুত করেছে মোবাইল ফোন কোম্পানি অপো। সিয়াম রংপুরে অপো'র মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
রবিবার (২০ জুন) দুপুরে মোবাইল ফোন কোম্পানি অপো থেকে নিজের চাকরি হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিয়াম ইবনে শরীফ।
সিয়াম বলেন, ত্ব-হা ইস্যুতে শনিবার আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমার বন্ধু আবু ত্ব-হাসহ চারজন গাইবান্ধায় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, এটা আমাকে জানানো হয়নি। একারণে ত্ব-হার নিখোঁজ হবার সংবাদে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন ছিলাম। অন্য বন্ধু-বান্ধবদের মত ত্ব-হার সন্ধান ও উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমার মা ত্ব-হাদের সেখানে লুকিয়ে থাকার ব্যাপারে আমাকে একটি বারও কিছু জানায়নি। পুলিশ ত্ব-হাকে উদ্ধারের পর জানলাম, সে আত্মগোপনে ছিল এবং সেটা নাকি আমাদের বাড়িতেই। অথচ এখন অভিযোগ করা হচ্ছে, আমি নাকি তাদেরকে লুকিয়ে রেখে মানববন্ধন করেছি। এটা মিথ্যা অভিযোগ, আমি কিছুই জানতান না।
এর আগে শুক্রবার(১৮ জুন) ত্ব-হাকে উদ্ধারের পর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত কারণে গাইবান্ধায় বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ধর্মীও বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর রংপুর নগরীর চারতলা এলাকায় তার প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন বলে জানান ত্ব-হার স্বজনেরা। খবর পেয়ে বেলা ৩ টার দিকে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ জানায়, ১০ জুন রাতে ঢাকার গাবতলী থেকে রংপুরের পথে রওনা হন ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গী। এর পর গাইবান্ধার ত্রি-মোহনিতে সিয়াম নামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন তারা। তবে কী সেই ব্যক্তিগত কারণ তা পুলিশ জানাতে রাজি হয়নি। পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে দুই সঙ্গীসহ ত্ব-হাকে আদালতে নেয়া হয়।
সেখানে জবানবন্দি শেষে রাত সাড়ে ১১টা দিকে আবু ত্ব-হা আদনান ও তার দুই সঙ্গীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক কেএম হাফিজুর রহমান। পরে রাতেই নিজ নিজ জিম্মায় তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকাল চারটার দিকে তিন সঙ্গীসহ আদনান রংপুর থেকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে ঢাকায় রওনা দেন। রাতে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হলে আদনান সাভারে যাচ্ছেন বলে তার মাকে জানান। এরপর রাত ২টা ৩৬ মিনিটে স্ত্রী হাবিবা নূরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের। এ সময় তিনি ঢাকার গাবতলীতে আছেন বলে জানান। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ সময় ত্ব-হার সঙ্গে আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন ছিলেন। ওই রাত থেকে তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে তাকে না পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর কোতয়ালী থানায় জিডি করেন তার মা আজেদা বেগম।