বাংলাদেশ ও ভারতের
মাঝে বিশ্বের দীর্ঘতম নৌবিহার ‘গঙ্গা বিলাস’
উদ্বোধনের তিন দিনের মাথায় বিভ্রাটের মুখোমুখি হয়েছে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ থেকে যাত্রা
শুরুর পর সোমবার মাঝ গঙ্গায় আটকে গেছে বিলাসবহুল এই প্রমোদতরী। বিহার রাজ্যের ছাপরায়
গঙ্গার অগভীর পানিতে হঠাৎ ‘গঙ্গা বিলাস’
আটকা পড়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের
বারানসীর রামনগরের সন্ত রামদাস ঘাট থেকে এই নৌবিহার তার যাত্রা শুরু করে বিহার-ঝাড়খণ্ড-কলকাতা-বাংলাদেশ
হয়ে আগামী ১ মার্চ তা পৌঁছানোর কথা আসামের ডিব্রুগড়ে। ওই নৌবিহারে সুইজারল্যান্ডের
৩২ জন পর্যটক রয়েছেন।
কিন্তু গঙ্গা
নদীতে কম পানি থাকার কারণে বিহারের ছাপড়ার দড়িগঞ্জ নামক জায়গায় মাঝ গঙ্গায় তা
আটকে যায় এবং সেখানেই সেটি নোঙর করে। জানা গেছে, পর্যটকদের ‘চিরান্দ’ নামক একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গা
দর্শনের জন্য গঙ্গা তীরে নোঙর করার কথা ছিল নৌবিহারটির। কিন্তু তার আগেই এই বিপত্তি।
এ ঘটনার সামনে
আসার পরই রাজ্য সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের (এসডিএমএ) একটি প্রতিনিধি দল
ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার করে। এরপর একটি ছোট্ট বোটে করে পর্যটকদের
দক্ষিণ পূর্বছাপড়ার ‘চিরান্দ শরণ’এ
পৌঁছে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি সম্পর্কে
বলতে গিয়ে ছাপড়ার সিও সতেন্দ্র সিং জানান,
চিরান্দে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসডিএমএ’এর টিম ঘাটে
মোতায়েন রয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া
যায়। গঙ্গা নদীতে পানি কম থাকার কারণে নৌবিহারকে তীরে আনতে সমস্যা হচ্ছে। তাই ছোট
ছোট বোট দিয়ে পর্যটকদের আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
দীর্ঘ ৩,২০০ কিলোমিটার
পথ অতিক্রম করবে এই নৌবিহার। গোটা যাত্রাপথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে প্রায় ৫১ দিন।
এই যাত্রাপথে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের জলপথ ছুয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে
প্রায় ২৭টি নদী প্রণাণির মধ্য দিয়ে যাবে এবং যাত্রাপথে ৫০ টিরও বেশি দর্শনীয় স্থান
পরিদর্শনের জন্য ওই স্টপেজগুলোতে দাঁড়াবে নৌবিহারটি। এর মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন ডেল্টা,
গঙ্গা আরতি, অসমের মায়ং’এর কালো জাদু এবং কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের মতো পার্ক। যাত্রাপথেই
পরিযায়ী পাখি, কাছিম, পাখির কলতান, বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
গঙ্গা বিলাস নামের
এই নৌবিহারের দৈর্ঘ্য ৬২.৫ মিটার, প্রস্থ ১২.৮ মিটার। এতে ১৮টি স্যুট আছে, সেই সাথে
আছে এলইডি টিভি, স্মোক ডিটেক্টর লাইফ জ্যাকেট, ফ্রেঞ্চ ব্যালকনি, রেস্তোরা, স্পা, সানডেক
ইত্যাদি। এই নৌবিহারে ৩৬ জন পর্যটক ও প্রায় ৪০ জন ক্রু মেম্বারসহ প্রায় ৮০ যান মানুষের
থাকার বন্দোবস্ত আছে।
ক্ষেত্রবিশেষে
প্রতিদিন যাত্রীপিছু এই যাত্রার জন্য টিকিটের দাম ধার্য করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার
রুপি, সেক্ষেত্রে ৫১ দিনের যাত্রার জন্য যাত্রীপিছু খরচ পড়বে প্রায় ১৩ লাখ রুপি।