Logo
শিরোনাম

উন্নত বিশ্বে কমছে শিল্প উৎপাদন : অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা তীব্র

প্রকাশিত:শনিবার ২৭ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ৯০০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে তাতে করে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা আরো তীব্র হচ্ছে। শুধু অর্থনৈতিক মন্দাই নয়, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে সামাজিক অস্থিরতা। নিম্ন আয়ের দেশে খাদ্য সংকটেরও পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানগুলো। খরার কারণে সামনের দিনগুলোতেও খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।

কোভিডজনিত বাধা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ফলে বিনিয়োগ কমে আসবে, এর ফলে বেকরত্বের হারও বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দার আশঙ্কা আরো তীব্র হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় সব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তি। অনেক দেশেই তা দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার এখন সর্বোচ্চ।

জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.১ শতাংশ। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি গত ৪৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চতে নিয়ে যেতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশঙ্কা করছে, এই বছরের শেষ দিকে মন্দা শুরু হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালের পর এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে মূল্যস্ফীতির হার। জুন মাসে ৯ দশমিক ১ শতাংশ থাকার পর জুলাইয়ে কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে।

যুক্তরাজ্যে জ্বালানির খরচ বাড়ছে ৮০ শতাংশ: যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। দেশটির নাগরিকদের বার্ষিক জ্বালানি বিল ৮০ শতাংশ বাড়ছে। শুক্রবার এই ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এর আগে এপ্রিলে রেকর্ড মাত্রায় ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এর ফলে গড়ে একজন ক্রেতার বার্ষিক জ্বালানি বিল ১ হাজার ৯৭১ পাউন্ড (২ লাখ ২১ হাজার ৭২৭ টাকা) থেকে বেড়ে হবে ৩ হাজার ৫৪৯ পাউন্ড (৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৪ টাকা)। ১ অক্টোবর থেকে এই নতুন মূল্য কার্যকর হবে।

ইউরোপ জুড়ে জ্বালানি সংকট: জ্বালানিসংকট প্রকট হচ্ছে ইউরোপে। সেই সঙ্গে আগস্ট মাস শেষ হতে চলল, অক্টোবর মাস থেকে সাধারণত শীত শুরু হয় এই মহাদেশে। অর্থাৎ শীত আসতে আর এক মাসের মতো বাকি। শীতের সময় ইউরোপে ঘর গরম রাখতে ফায়ারপ্লেস জ্বালাতে হয়। কিন্তু এবার শীতে গ্যাস রেশনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে। কারণ, তেল-গ্যাসের বিকল্প উত্স এখনো তারা বের করতে পারেনি। ফলে যে রাশিয়ার কাছ থেকে তারা এত দিন চাহিদার ৩৫ শতাংশ আমদানি করত, সেই আমদানি বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের বিপদে পড়েছে তারা।

খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি: বিশ্বে উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশেই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি অবস্হা চলছে। মূলত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্হিতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অনেক দেশকে খাদ্য কিনতে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। অনেক দেশ যে বাড়তি ব্যয় করছে তার পরিমাণ দেশগুলোর মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রায় ১ শতাংশের সমান। কিছু দেশ এই অতিরিক্ত ব্যয়ভার মেটাতে সক্ষম হলেও অনেক দেশ এর প্রভাবে ঋণসংকটে পড়তে পারে।

অর্থাত্ তাদের পক্ষে ঐ বাড়তি ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২০২২ সালের ২৯ জুলাই কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ১৯ শতাংশ বেড়েছে। ভুট্টা ও গমের মূল্যসূচক যথাক্রমে ১৬ ও ২২ শতাংশ বেড়েছে। আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ২৫৫ শতাংশ, ভেনিজুয়েলার ১৫৫ শতাংশ ও তুরস্কের ৯৪ শতাংশ।

উন্নত বিশ্বে শিল্প উত্পাদন কমছে: ক্রেডিট রেটিং সংস্হা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্যানুসারে, আগস্টে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। এটি ২০২০ সালের মে মাসের পর সবচেয়ে দুর্বল স্তরে নেমে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের শিল্পোত্পাদনও সংকুচিত হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটনের মতো পরিষেবাগুলোর লকডাউন-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রায় স্হবির হয়ে পড়েছে। জার্মানি বিশেষভাবে পিছিয়ে রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক উত্পাদন ২০২০ সালের জুনের পর সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে। পাশাপাশি ফ্রান্সে অর্থনৈতিক কার্যক্রম দেড় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংকুচিত হয়েছে। এদিকে নতুন করে কোভিড সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় জাপানে শিল্পোত্পাদন সংকুচিত হয়েছে।

 ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পরিস্হিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। জাপানের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার পরিষেবা খাত সাত মাসের মধ্যে প্রথম বারের মতো সংকুচিত হয়েছে। যদিও পর্যটন খাতে সম্প্রসারণের জন্য সংকোচনের হার কিছুটা কমেছে। করোনা মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় ধাক্কা লেগেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্ অর্থনীতির দেশ চীনে। এপ্রিল-জুন প্রান্িতকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশে। ১৯৯২ সালের পর দেশটির অর্থনীতিতে এতটা খারাপ অবস্হা আর দেখা যায়নি।

খাদ্যসংকটের মুখে ৩৪ কোটি মানুষ: বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনা মহামারি, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্ব জুড়ে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। করোনা মহামারির পর জিনিসপত্রের দাম ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। প্রধান অর্থনীতিগুলোর এ পরিসংখ্যান বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন সুদ হার বাড়িয়ে পরিস্হিতি সামলাতে চেষ্টা করছে তখন এ পদক্ষেপ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

নিউজ ট্যাগ: মন্দার আশঙ্কা

আরও খবর

এলপিজির দাম আরও বাড়ল

বৃহস্পতিবার ০২ নভেম্বর 2০২3