রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার ১২টি কারণ চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।
রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন ছিঁড়ে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনার পর প্রথমে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়, পরে সেটি বাড়িয়ে পাঁচ সদস্য করা হয়। ওই কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়। এরপর বুয়েটের বিশেষজ্ঞকেও কমিটিতে যুক্ত করা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রেফতার ব্যক্তিসহ তারা সবার বক্তব্য নিয়েছেন।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজে তার বিবরণ আছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি পত্র প্রেরণ করেছে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেটি মন্ত্রণালয়ে জানায়নি। তারা সেটি জানালে আমরা চাইনিজ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।
কারণগুলো হলো-
১. সরকারি ছুটির দিনে কাউকে না জানিয়ে কাজ করেছে।
২. প্রথমবার দিনের বেলায় গার্ডার স্থাপনের কাজ করা, অন্যদিন তারা রাতে কাজটি করত।
৩. ক্রেনটি সহকারী দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, ড্রাইভার থাকলে সেটি হতো না।
৪. ক্রেনটির লাইসেন্স ছিল না।
৫. ক্রেনটি যেখানে চালানো হচ্ছিল সে জায়গা অসমতল ছিল।
৬. ক্রেনটির ডিজিটাল মনিটর ছিল না।
৭. কাজের পূর্বানুমতি ছিল না।
৮. ট্রাফিক ব্যবস্থা ছিল না, মূলত ট্রাফিককে জানাতে হয়।
৯. ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে যোগ্য লোক ছিল না, নিজেরা এসব লোক রেখেছিল।
১০. সেফটি ইঞ্জিনিয়ারের যথাযথ যোগ্যতা ছিল না।
১১. ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ছিল না। সেজন্য গার্ডার সরাতেও সময় লেগেছে।
১২. ঠিকাদার হিসেবে যাদের কাজ করানো হয়েছিল তাদের কোনও অনুমোদন ছিল না।
গত ১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা জসীম উদ্দীন রোডের মাথায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের একটি বক্সগার্ডার ট্রেইলারে তোলার সময় ভারসাম্য হারায় ক্রেন। বিপুল ওজনের কংক্রিটের গার্ডারটি টঙ্গীমুখী সড়কে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। ভারী গার্ডারের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যায় প্রাইভেট কারটি। এতে প্রাইভেট কারের ভেতরেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের। দুজনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। হাতহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।