ভালোবাসা না থাকলে
পৃথিবী টিকে থাকত না। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অফুরন্ত ভালোবাসা আছে বলেই এত কষ্ট
করে তারা সন্তানকে লালন-পালন করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসার কারণেই পারিবারিক
বন্ধন আমরণ হয়। সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী তার
কিছু উদাহরণ দেয়া হলো-
আল্লাহর প্রতি
ভালোবাসা : প্রতিটি মানুষের প্রথমেই দরকার আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। ঈমানের ভিত্তিতে
মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক ও ভালোবাসা তৈরি হয়। যার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়,
তার চাওয়া-পাওয়া অগ্রাধিকার পায়। আল্লাহকে ভালোবাসার উপায় ও পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ
বলেন, ‘মনে রেখো, যারা
আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোনো ভয়-ভীতি নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং
তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর
কথার কখনো হেরফের হয় না। এটাই হলো মহা সফলতা।’ (সুরা : ইউনুস,
আয়াত : ৬২-৬৪)
রাসুল (সা.)-এর
প্রতি ভালোবাসা: রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া ঈমানের পূর্ণতা আসে না।পার্থিব
সব কিছুর ওপর রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তার আনুগত্যের
মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ
পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার মাতা-পিতা সন্তান-সন্ততি
ও সব মানুষ থেকে প্রিয় হব।’ (বুখারি, হাদিস
: ১৫)
মুমিনদের প্রতি
ভালোবাসা: সব ঈমানদার একে অন্যের ভাই। ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধনের ক্ষেত্রে সময়-কাল বা
ভৌগোলিক অবস্থাকে অন্তরায় করা যাবে না।
নোমান ইবনে বাশির
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি
দেহের মতো। যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়, যদি তার মাথা অসুস্থ
হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস
: ৬৭৫৪)
সব মানুষের প্রতি
ভালোবাসা: মানুষ হিসেবে সবাই এক আদমের সন্তান। সব মানুষের প্রতি ভালোবাসা, উদার মনোভাব
পোষণ এবং মানবীয় আচরণ প্রদর্শন ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের
প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৩)
জীবের প্রতি ভালোবাসা:
মানুষই শুধু মানুষের ভালোবাসা লাভের যোগ্য নয়, বরং বন্য ও গৃহপালিত পশু-পাখির প্রতিও
ভালোবাসা প্রদর্শন ও দয়াশীল আচরণ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবিরা
জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্যও কি আমাদের
পুরস্কার আছে? রাসুল (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, প্রত্যেক
দয়ার্দ্র হৃদয়ের অধিকারীদের জন্য পুরস্কার আছে।’ (বুখারি, হাদিস
: ৫৬৬৩)
বৃক্ষলতার প্রতি
ভালোবাসা: শুধু মানুষ আর প্রাণী নয়, বৃক্ষ-তরুলতাকেও ভালোবাসতে হবে। এরাই প্রকৃতির
প্রাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী। কাজেই বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করতে হবে। আনাস
(রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে
জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তাহলে
সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (বুখারি, আদাবুল
মুফরাদ : ৪৭৯; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৮৩)
সব সৃষ্টির প্রতি
ভালোবাসা: আল্লাহর সব সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে। আনাস ও আবদুল্লাহ
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘গোটা সৃষ্টিজগৎ
আল্লাহর পরিবার। সুতরাং সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় ওই ব্যক্তি, যে তাঁর
(আল্লাহর) পরিবারভুক্তদের প্রতি সদাচার করে।’ (মিশকাত, হাদিস
: ৪৯৯৯)
ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা সব সময়ের জন্য এবং সবার জন্য। ভালোবাসায় আছে আল্লাহর নির্দেশনার বাস্তবায়ন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। কোনো অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার ভালোবাসা কোনোভাবেই ইসলামের ভালোবাসা নয়।