বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
আসন্ন ভারত সফরের এজেন্ডায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ইস্যুটি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিবেশী এই দেশটিতে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।
বুধবার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র
সচিব মাসুদ বিন মোমেন এএনআই’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসনের ফলে উদ্ভূত
বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করবেন। এর মধ্যে মৌলবাদ বৃদ্ধি, মাদক পাচার এবং নারী
ও শিশুসহ মানব পাচারের বিষয়টি রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের কাছে একমাত্র
সম্ভাব্য সমাধান হলো (রোহিঙ্গাদের) তাদের রাখাইন প্রদেশে (মিয়ানমার) প্রত্যাবাসন।
আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা
করবেন তখন তিনি এই বিষয়টিও উত্থাপন করবেন যে, এই প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় ভারত কীভাবে
আমাদের সাহায্য করতে পারে।’
মোমেন আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
কাছে অনুরোধ করছি যে, এই বিশাল জনসংখ্যা অর্থাৎ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয়
মানবিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কেবল সহায়তা করাই নয়, একইসঙ্গে আমাদের এই সমস্যার কিছু
টেকসই সমাধানের দিকেও নজর দিতে হবে। আমাদের কাছে একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হচ্ছে, মিয়ানমার
থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবাসন।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় ভারতের
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি, তবে আমি মনে করি অন্য দেশগুলো মিয়ানমারের সাথে সম্মত
হলে সেটি (প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায়) কিছু সাহায্য বা সহায়তা করতে পারে।’
“মিয়ানমার ও বাংলাদেশের
অভিন্ন প্রতিবেশী ভারত। আমরা এ বিষয়ে অতীতের মতো আবারও ভারতকে অনুরোধ করব যেন তারা
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে তারা যখন মিয়ানমারের
রাখাইনে ফিরে যাবে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উন্নত স্বাস্থ্যসেবা
এবং টেকসই জীবিকার পাশাপাশি বসবাসের মতো উপযোগী পরিবেশ পেলে রোহিঙ্গা তাদের দেশে ফিরে
যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে হয়তো কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হবে এবং মিয়ানমার
সম্মত হলে ভারত সেই সহায়তা করতে পারে এবং এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য চিত্র বদলে দেওয়ার
মতো ঘটনা।”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে গত
বছর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনার কথা স্মরণ করেন মোমেন।
“আমি নিশ্চিত,
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত কিভাবে সহায়তা করতে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন।”
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখের বেশি
রোহিঙ্গা নাগিরক বর্তমানে কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শারণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে
আছে। শরণার্থীদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।
পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, “কক্সবাজারের এই
জায়গাটি (কুতুপালং) খুবই ছোট। আমরা রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাষানচরে স্থানান্তরের মাধ্যমে
জায়গাটির ওপর থেকে চাপ কমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এটিও সাময়িক ব্যবস্থা।”
এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিও
তৈরি হয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই মাদক, মানব পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে
পড়ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ছড়ানোর শঙ্কাও রয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের
৬০ শতাংশের বেশি তরুণ। তাদের মধ্যে ধর্মীয় মৌলবকাদ ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে এবং সেটি হলে
শুধু বাংলাদেশই নয়, এ অঞ্চলের জন্যই মাথাব্যথার কারণ হবে। এছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া,
থাইল্যান্ড মাদক ও মানব পাচার এবং আন্দামান সাগরের কাছেও আমরা বেশকিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড
দেখেছি।”
কক্সবাজার জেলা পুলিশের বরাত দিয়ে এএনআই
জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো-
হত্যা, মাদক ও মানব পাচার, অস্ত্র ও সোনা চোরাচালান, ধর্ষণ, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি
এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের
দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সেখানেও তুলে ধরে বিশ্বের সমর্থন চাইবেন তিনি।