জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বিদেশগামী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া
প্রতারকচক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার
অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।গ্রেফতাররা হলেন- মো. সামিউল ইসলাম সজিব ও মো. নাইম হোসেন
নিলয়।
গ্রেফতারের সময়
তাদের কাছ থেকে জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন ও ৭টি ভুয়া সিল
এবং বেশকিছু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জব্দ করা হয়।বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট)
ডিবি কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ
সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কিছু
ব্যক্তি কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের
অনুরূপ নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে বিদেশগামী মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে
বলে তথ্য পাওয়া যায়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম
ইনভেস্টিগেশন টিম। একপর্যায়ে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের অপরাধের
কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, তারা ২০১৯ সাল থেকে `JSN International
Consultancy' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এশিয়া, মধ্যপাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে
পাঠানোর জন্য বিদেশ গমনেচ্ছুদের সঙ্গে চুক্তি করতো। এজেন্সির শর্তানুযায়ী, প্রত্যেক
প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম নিতো। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও
ক্ষেত্রবিশেষে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আলাদা করে টাকা
নিতো।
এরপর আসল পুলিশ
ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট না দিয়ে কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
সার্টিফিকেটের অনুরূপ নকল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সফট
কপি আকারে সাবমিট করতো।
তিনি আরও বলেন,
সম্প্রতি তারা ৩০ জন ব্যক্তিকে রোমানিয়ায় পাঠানোর জন্য চুক্তি করে। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার
জন্য প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা
দেয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যাচাই করে জানতে পারে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটগুলো
ভুয়া। যার ফলশ্রুতিতে ওই কোম্পানি ৩০ জন ব্যক্তির ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দেয়। ফলে
প্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
এমনকি দীর্ঘ দেড়
বছর অপেক্ষা করেও তারা আজ পর্যন্ত তাদের প্রত্যাশিত দেশে যেতে পারেননি। টাকাও ফেরত
পাননি।মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিদেশ গমন কিংবা দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে
চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গেলে মহাবিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি পেশাদার বা চিহ্নিত
অপরাধীরাও জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে যেতে পারে।
এজন্য বিদেশ যাওয়ার আগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সঠিক কি-না তা যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ
দেন তিনি।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
সার্টিফিকেট নকল রোধে বাংলাদেশ পুলিশ রেফারেন্স নম্বরসহ কিউআর কোড সিস্টেম চালু করেছে।
যখন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ
প্রার্থীর দেওয়া তথ্যসমূহ যাচাই করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করে। ইস্যুকৃত
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের উপরের বাম পাশে রেফারেন্স নম্বরসহ একটি কিউআর কোড
থাকে।
এই রেফারেন্স
নম্বর ও কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রার্থীকে শনাক্ত করা যায়। এমনকি বিভিন্ন নামে ইস্যুকৃত
প্রত্যেকটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের কিউআর কোড ভিন্ন। কিন্তু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
সার্টিফিকেট এরকমটি পাওয়া যায় না। কেননা প্রতারকচক্র একটি কিউআর কোড ব্যবহার করেই একাধিক
জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে। সেজন্য যাচাই করলে একই নাম ঠিকানা আসবে।
একই নাম ঠিকানা আসলেও তা পুলিশের অফিসিয়াল লিংকে শো করবে না।
গ্রহণকৃত পুলিশ
ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জাল কি না তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুইভাবে যাচাই করা যায়।
প্রথমত, পুলিশের অফিসিয়াল সাইটে (www.pcc.police.gov.bd) রেফারেন্স নাম্বার সার্চ করে।
আর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের উপরের বাম পাশে কিউআর কোডটি স্ক্যান করে।