অন্য দলগুলো যেখানে
কাতারে এসেছে বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে, সেখানে ফ্রান্স কাতারে পা রেখেছে সোনালি ট্রফিটি
নিজেদের সঙ্গে নিয়েই। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন তারা, এবারের আসরে ফ্রান্সের ওপর শিরোপা
ধরে রাখার চাপটা বেশি থাকবে এটিই যেন স্বাভাবিক। সেই চাপের সঙ্গে দিদিয়ের দেশমের দলের
সঙ্গে যোগ হয়েছে অদৃশ্য শত্রু ইনজুরি। এত প্রতিকূলতা সঙ্গে নিয়েই কাতারের মাটিতে নিজদের
প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে ফরাসিরা।
আল জানুব স্টেডিয়ামে
বাংলাদেশ সময় আজ দিবাগত রাত ১টায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে
ফ্রান্স। সকারুদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে
ইনজুরি শঙ্কা ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমকে নতুন
করে ভাবিয়ে তুলেছে।
চোটের কারণে বিশ্বকাপের
দলে জায়গা হয়নি তারকা মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে আর পল পগবার, জায়গা পাননি ডিফেন্ডার
প্রেস্নেল কিম্পেম্বেও। বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইন থেকে ইনজুরি নিয়ে ফিরে গেছেন এই মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার ক্রিস্টোফার
এনকুনকু। সর্বশেষ অনুশীলনে চোট পেয়ে সদ্যই দল থেকে ছিটকে গেছেন দলের সবচেয়ে বড় ভরসা
ব্যালন ডি’অর বিজয়ী করিম বেনজেমা।
ইনজুরি, সাম্প্রতিক
ফলাফল ও মাঠের বাইরের বেশ কিছু বিষয় নিয়েও ফরাসি দলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সব কিছুকে
ছাপিয়ে ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শিরোপাটা ধরে রাখা ফ্রান্সের
জন্য কতটা সম্ভব তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
গত বছর ফরাসিদের
পারফরম্যান্সে বেশ চড়াই উৎরাই লক্ষ্য করা গেছে। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে শেষ ১৬’তে সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে হেরে
বিদায় নেওয়া দলটি উয়েফা ন্যাশনস লিগ জিতে কিছুটা হলেও পাপ মোচন করেছে। যে কারণে লস'
ব্লুসদের নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে তেমন একটা আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। শেষ ছয়টি ম্যাচের
মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে দেশমের শিষ্যরা। এর মধ্যে ডেনমার্কের বিপক্ষে দুটি পরাজয় দলকে
নতুন করে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে। কারণ বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী
ডেনমার্ক।
তবে সবকিছু ছাপিয়েও
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন তকমা লেগে আছে ফরাসিদের সঙ্গে। তাই তাদেরকে এবার শিরোপার লড়াই
থেকে কোনভাবেই দূরে সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এছাড়া ইনজুরিতে অনেকে ছিটকে গেলেও দলে রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে আর উসমানে ডেম্বেলেদের মত তরুণ
তারকা, সঙ্গে পাবেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান আর অলিভিয়ের জিরূদের মতো অভিজ্ঞ তারকদের।
চার বছর আগে রাশিয়া
বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ে অবদান রাখা মধ্যমাঠের দুই মূল কান্ডারি এনগোলো কান্তে ও পল পগবার
কেউই থাকছেন না এবারের বিশ্বকাপে। চেলসির কান্তে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করছেন।
অন্যদিকে হাঁটুর
ইনজুরি কাটিয়ে চলতি মৌসুমে এখনো জুভেন্টাসের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি পগবা। আগামী সপ্তাহে
দেশমের দলে পগবার ফেরার আশা করা হচ্ছিলো। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে গ্রীষ্মে
তুরিনের জায়ান্ট ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর নিজেকে কোনভাবেই ফিট করে তুলতে পারছেন না পগবা।
ফরাসি অধিনায়ক
হুগো লরিস স্বীকার করেছেন পগবার দলে থাকাটা জরুরী ছিল। এই দুই মিডফিল্ডার মিলে ১৪৪টি
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে ফ্রান্সের মধ্যমাঠে বিশাল একটি শুন্যতার
সৃষ্টি করবে। এই অভাব পূরণে ইতোমধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের অরিলিয়েন চুয়ামেনি, এডুয়ার্ডো
কামাভিঙ্গা আর জুভেন্টাসের আদ্রিয়ান র্যাবিওটের ওপরই ভরসা রাখবেন দেশম। ইনজুরি বাঁধা
কাঁটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয় তুলে নিয়েই বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশন শুরু করতে চাই
ফরাসিরা।
এদিকে, প্লে-অফে
পেরুকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।সকারুদের
কোচ গ্র্যাহাম আর্নল্ড প্লে-অফের ফাইনালে ১২০ মিনিটে গোলরক্ষক ম্যাথিউ ডেভিড রায়ানকে
বদলি করে মাঠে নামিয়েছিলেন দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক এ্যান্ড্রু রেডমায়নকে। সেই রেডমায়নের
উপর ভর করেই বিশ্বকাপের মঞ্চে পৌঁছায় সকারুরা।
এই নিয়ে চতুর্থবারের
মত বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নাম লিখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগের তিন আসরেই গ্রুপ পর্ব
থেকেই বিদায় নেওয়া অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে গত ৯ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে। ২০১০ সালে সার্বিয়ার বিপক্ষে
সকারুরা জিতেছিলো ২-১ গোলে।
তবে সাম্প্রতিক
ফর্ম এবার বেশ আশা দেখাচ্ছে সকারুদের। বিশ্বকাপের
আগে সেপ্টেম্বরে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে
দুই ম্যাচে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে
ভালো খেলা উপহার দিতে চাই অস্ট্রেলিয়া।
চার বছর আগেও
গ্রুপ পর্বে একে অপরের মোকাবেলা করেছিল ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া। আঁতোয়ান গ্রিজম্যানের
পেনাল্টি ও আজিজ বেহিচের আত্মঘাতী গোলে ২-১ গোলে জিতেছিলো দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা।
এর আগে পাঁচবারের মোকাবেলায় সকারুজরা একমাত্র জয় পেয়েছিলো ২০০১ সালের কনফেডারেন্স কাপে।