শেষ ওভারের রোমাঞ্চের পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা শেষ ওভারের রোমাঞ্চের পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ১২৪ রানে আটকা পড়ার পর কে ভেবেছিল ম্যাচটাতে এত রোমাঞ্চ জমে আছে? বাংলাদেশের মতো ধীরলয়ে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের শেষ ওভারে দরকার হয় ৮ রান। পুরো ম্যাচে বল হাতে না তোলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এগিয়ে এলেন শেষ ওভার করতে। প্রথম বল ডটের পরই শুরু রোমাঞ্চ। দ্বিতীয়-তৃতীয় বলে আউট সরফরাজ আর হায়দার। চতুর্থ বলে ইফতেখার আহমেদের ছক্কা রোমাঞ্চ কিছুটা কমিয়ে দিতে বাধ্য করল। তবে পঞ্চম বলে তাঁকে আউট করে যেন রোমাঞ্চের শেষটা দেখিয়ে ছাড়তে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে শেষ বলে মোহাম্মদ নাওয়াজের চার হতেই যেন সব রোমাঞ্চের ইতি।
বাংলাদেশের অল্প রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। আগের দুই ম্যাচের মতো দ্রুত না হলেও সপ্তম ওভারে ফিরে যান বাবর (১৯)। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বলে নাঈম শেখের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হায়দারকে নিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচে রাখেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুজন ৫১ রানের জুটিতে ম্যাচের গা থেকে অনিশ্চয়তা শব্দটা মুছে দেন। অভিষিক্ত শহীদুল ইসলামের বলে আউট হওয়ার আগে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন রিজওয়ান।
রিজওয়ানের বিদায়ের পর সরফরাজ আহমেদকে নিয়ে পাকিস্তানের জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারার পথে ছিলেন হায়দার। তবে মাহমুদউল্লাহর শেষ ওভারে যত বিপত্তি। ম্যাচের গা থেকে মুছে দেওয়া অনিশ্চয়তা শব্দটার আগমন তো এই ওভারেই। শেষ ওভারে পাঁচ বলে তিন উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের মুখে ছিল পাকিস্তান। তবে রোমাঞ্চের ইতি টেনে শেষ বলে চার মেরে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন নাওয়াজ। পাকিস্তান ম্যাচ জেতে পাঁচ উইকেটে। টানা তিন টি-টোয়েন্টি জিতে বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করল পাকিস্তান। ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে প্রথমাবার হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
আজ তিন পরিবর্তনের একটি ওপেনিংয়ে। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ সাইফ হাসানকে বসিয়ে তিন থেকে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে। তবু ঠেকানো যায়নি ওপেনিংয়ের ব্যর্থতা। দলীয় ৭ রানে ব্যক্তিগত ৫ রানে শান্ত আউট হলে এই জুটি ভাঙে। আগের দুই ম্যাচে না থাকা শামীম হোসেন একাদশে ঢুকেই উঠে আসেন তিনে। শুরুটা দারুণ সম্ভাবনাময়ী ছিল এই বাঁহাতি ব্যাটারের।
শাহনেওয়াজ দাহানিকে চার মেরে প্রথমবার তিনে শুরু করেন শামীম। পরের ওভারে কিছুটা রয়েসয়ে থাকার পর দাহানির দ্বিতীয় ওভারে টানা তিনটি ডট দেন শামীম। তবে পরের দুই বলে দারুণ দুটি চারে ভালো কিছুর বার্তা দিচ্ছিলেন শামীম। অন্য প্রান্তে চুপচাপ ছিলেন নাঈম শেখ। অবশ্য পুরো ইনিংসজুড়েই রানের জন্য সংগ্রাহ করেছেন তিনি। এর মধ্যে শামীমের আশাজাগানিয়া ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে উসমান কাদিরের লেগ স্পিনে। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বলটাকে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন শামীম কিন্তু ডিপ মিডউইকেটে ইফতেখার আহমেদ অপেক্ষায় ছিলেন ক্যাচের। তাঁর হাতেই বন্দী হন শামীম (২২)।
রান বাড়ানোর চেষ্টার কমতি রাখেননি চারে নামা আফিফ হোসেনও। চেষ্টাগুলো পূর্ণতা পায়নি শামীম-আফিফদের ইনিংসগুলো বড় না হওয়ায়। শামিমের পর কাদিরের বলে আফিফের বিদায়ে আরেকটি ভালো ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটে। ১২তম ওভারের শেষ বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে স্লগ সুইপ করে ছয় মেরেছিলেন আফিফ, ১৫তম ওভারে দ্বিতীয়বার একই কাজ করতে গিয়ে এবার ক্যাচ তুলে দেন। বোলার একই কাদির। শামিম-আফিফের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ইনিংস এগিয়ে নিতে পারেননি নাঈম-মাহমুদউল্লাহরা।
এক প্রান্তে উইকেট আগলে রেখে রান তুলতে পারেননি নাঈম। ১৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৫০ বলে করেন ৪৭ রান। সুবিধা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। উইকেটে ছটফট করে আউট হন ১৩ রানে। বাংলাদেশ থামে ১২৪ রানে। এই সংগ্রহ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি।