বাংলাদেশি পাসপোর্ট থেকে- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ বাক্যটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখন সেখানে লেখার প্রক্রিয়ায় রয়েছে- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে- তাহলে কি পৃথিবীর একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের পথে হাঁটছে? নাকি কেবলই পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েলের’ প্রসঙ্গটি বাদ যাচ্ছে?
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের পাসপোর্টের স্ট্যান্ডার্ড রাখতে গিয়ে এটা করা হয়েছে।’
‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’- বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা এই বাক্যটি থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি বাদ পড়ছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্তেই নতুন ই পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের প্রসঙ্গটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন লেখা থাকছে- এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ।
বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্টে এক সময় লেখা থাকত- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল, তাইওয়ান অ্যান্ড দ্য রিপাবলিক অব সাউথ আফ্রিকা’ কথাটি। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তাইওয়ানের নামটি ওই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ গেলেও ইসরায়েল থেকে যায়। দশককাল আগে হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) চালুর পরও আগের মতো প্রথম পৃষ্ঠায়ই লেখাটি ছিল।
এখন ই পাসপোর্টে এসেছে পরিবর্তন। তাতে লেখা হচ্ছে শুধু- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে এই পরিবর্তনটি আলোচনায় আসলো। আট দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে জিইয়ে থাকা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ, ফলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। বিপরীতে ফিলিস্তিনকে দূতাবাস করতেও ঢাকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে।
পাসপোর্টে পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আইয়ুব চৌধুরী বলেন, ‘আমি সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আছি। আমি সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দু’ধরণের পাসপোর্ট রয়েছে। একটি হলো ‘এমআরপি’ এবং অন্যটি নতুন পাসপোর্ট ‘ই-পাসপোর্ট’। প্রথমত, এখানে পাসপোর্টের গায়ে কি লেখা রয়েছে সেগুলো কোনও ইস্যু না। পাসপোর্টের যে চিপ বা সেটির মেশিন রিডেবল জোনে কি লেখা রয়েছে, সেটিই মুখ্য বিষয়। দ্বিতীয়ত, একটা দেশের সাথে অন্য দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কি হবে না হবে সেটা পাসপোর্টের উপর নির্ভর করে না। তৃতীয়ত হলো- একটি দেশে ভ্রমণ বা যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্ভর করে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও ভিসা পাওয়া নিয়ে। এখানে পাসপোর্টে কি লেখা রয়েছে সেটা বড় কোন বিষয় নয়।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যুক্তি উপস্থাপন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশ এ শব্দটি ব্যবহার করেনি। এমনকি আরব অঞ্চলের দেশগুলোও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ই- পাসপোর্টে পরিবর্তন এলেও এমআরপিতে তা আগের মতোই রয়েছে। পাসপোর্টের লেখায় পরিবর্তন হলেও তা পররাষ্ট্র নীতির কোনো পরিবর্তন নয়।