বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)
ভুলে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) শিল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ৩০ হাজার কোটি
টাকার বিনিয়োগ ধ্বংস হচ্ছে মন্তব্য করেছেন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের
(লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, এলপিজি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম
পদার্থ। এ ধরণের পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রবিধান বিইআরসির নেই। তবুও তারা আদালতের
চাপে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা তাদেরকে সহায়তা করেছি। কিন্তু দেখা
গেলো যখন দাম ঘোষণা হলো, তারা একপেশে একটা দাম ঘোষণা করল। তারা আসলে এই খাতটিকে ধ্বংস
করতে চায়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল
হোটেলে লোয়াব আয়োজিত ‘এলপি গ্যাসের মূল্যহার এবং এলপি গ্যাস
শিল্প, বাজার ও ভোক্তাসাধারণের ওপর ঘোষিত মূল্যহারে প্রভাব’ শীর্ষক সংবাদ
সম্মেলনে এসব কথা বলেন লোয়াবের সভাপতি।
এ সময় বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের পক্ষে
লোয়াবের প্রতিনিধি হিসেবে প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল এবং ওমেরা’র এলপি গ্যাসের
পক্ষে প্রকৌশলী শামসুল হক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন। বেক্সিমকোর মুনতাসির আলম ও পেট্রোম্যাক্সের
নাফিস কামালসহ লোয়াবের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এতো বড় একটা
শিল্প গড়ে তুলেছি পাঁচ বছরে। সরকার খুবই সহানভূতিশীল এবং সরকারের উদ্যোগের ফলেই কিন্তু
এই শিল্পের প্রসার ঘটেছে। প্রতি বছর ১০ লাখ টনের বেশি এলপিজি আমদানি হচ্ছে। এর সুবিধা
সারা বাংলাদেশে মানুষ প্রতিটা ক্ষেত্রেই গ্রহণ করছে। সেটা বন্ধ হতে চলেছে। এখন যদি
আমরা সরবরাহ বন্ধ করতে যায় তাহলে সাধারণ ভোক্তা কষ্ট ভোগ করবে। কিন্তু এখন যদি উদ্ভূত
পরিস্থিতির জন্য কিছু ঘটে তাহলে সব দায়দায়িত্ব বিইআরসি’র।’
লোয়াবের সভাপতি বলেন, ‘বিইআরসি ঘোষিত
মূল্যহার প্রকৃত উত্পাদন ব্যয়ের চেয়েও কম এবং ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারদের যে ব্যয়
ধরা হয়েছে তা সরকারি এলপি গ্যাসের তুলনায় অনেক কম। যেমন সরকারি এলপি গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরের
জন্য বিইআরসি নির্দিষ্ট করেছে ৫০ টাকা, অপরদিকে বেসরকারি এলপি গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরের
জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে ২৪ টাকা মাত্র। এই অসঙ্গতি ডিস্ট্রিবিউটরদের ক্ষুব্ধ করেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মচারি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষিত মূল্যহারে
এলপি গ্যাস বিক্রির জন্য হয়রানি শুরু করলে অনেক ডিলার ও রিটেইলার এলপি গ্যাসের ক্রয়
বিক্রয় বন্ধ করে দেয়।
আজম জে চৌধুরী আরো বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবের
সঙ্গে বিইআরসি ৫-৬টি কস্ট কম্পোনেন্টের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গরমিল করায় এই সমস্যা হয়েছে।
আশা করা যায়, বিইআরসি মূল্যহার সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে তারা এই গরমিল নিরসন
করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নতুন মূল্যহার ঘোষণা করবেন। ঘোষিত মূল্যহারে সৌদি কন্ট্রাক্ট
প্রাইস (সিপি) গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও ত্রুটি রয়েছে। যে মাসের জন্য মূল্যহার ঘোষিত হবে সে মাসের মূল্যহার না নিয়ে
এক মাস আগেকার মূল্যহার নেওয়ার ফলেও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।’
সাবসিডি’র বিষয়ে লোয়াবের
সভাপতি বলেন, ‘জ্বালানির প্রত্যেকটি ফর্মেই সাবসিডি আছে, এলএনজি,
ডিজেল ও ইলেকট্রিসিটিতেও সাবসিডি আছে। শুধু একমাত্র এলপিজি খাতেই সাবসিডি নেই। সব জ্বালানিতেই
যেহেতু সাবসিডি আছে, এখন সরকার যদি মনে করেন ভোক্তা পর্যায়ে কম দামে পৌছে দেওয়ার জন্য
এলপিজি খাতে সাবসিডি দেওয়া উচিত, তাহলে উদ্যোগ নিতে পারে। সহজলভ্য করতে হলে অবশ্যই
সরকারের সাবসিডি দিতে হবে। বর্তমানে এই খাতের সবাই লস করছি।’
প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের
একটি সুচিন্তিত ও ভালো সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র ৫ বছরেই এই খাত প্রবৃদ্ধি করেছে। এতো
অল্প সময়ের মধ্যে যে পরিবর্তন হয়েছে, তা অন্য কোনো খাতে দেখা যায়নি। আমরা চাই ফিক্সড
একটা প্রাইজ হোক, সেটা অবশ্যই যুক্তিস্মত হোক। যেটা ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ থাকবে
এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থও সংরক্ষণ থাকবে। আবার ভোক্তাকে সংরক্ষণ করতে গিয়ে যাতে ব্যবসায়ীদের
মেরে ফেলা না হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান এলপিজি
খাতে মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে
এমন কোনো শিল্প নেই যা পাঁচ বছরে জিডিপির ৬/৭ শতাংশ হয়েছে। এলপিজি ইন্ডাস্ট্রির ফলে
আমরা প্রতি বছর ৫০ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস সাশ্রয় করছি। এই ৫০ হাজার কিউবিক মিটার
গ্যাস বর্তমানে প্রডাক্টিভ সেক্টরে ব্যবহার হচ্ছে, যা সার বিদ্যুত্ এবং অন্যান্য উৎপাদন
খাতে ব্যবহার করা হয়। যেকোনো দেশে এলপিজি সেক্টরের বৃদ্ধি হলে এর পাশাপাশি অন্যান্য
শিল্প বৃদ্ধি হয়।
সম্মেলনে আরো জানানো হয়, আমরা যে মূল্যে
এলপিজি গ্যাস বিক্রি করেছিলাম তাতে লোকসানে ছিলাম। ২০১৬ সালে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের
একটি মামলার কারণে বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করা শুরু করে। যখন এলপিজি গ্যাসের বাল্ক
প্রাইস ছিল ১৫০০ টাকা, সেই প্রেক্ষাপটে এই মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে সেই প্রেক্ষাপট
পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ বিষয়ে আমরা বিইআরসির সঙ্গে বারবার
কথা বলেছি, তাদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু এই বিষয়ে তাদের কোনো দক্ষতা, যোগ্যতা কোনো কিছুই
নেই। দুঃখের বিষয় তারা এমন একটি মূল্য নির্ধারণ করেছে, যা বর্তমান বাস্তব মূল্যের চেয়ে
অনেক কম।
অটোগ্যাস নিয়ে বলা হয়, অটোগ্যাসের এমআরপি
প্রতিমাসে পরিবর্তন করা হলে গ্রাহক পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেবে। কারণ বাজারে যানবাহনের
অন্য যে সকল জ্বালানি- ডিজেল ও সিএনজি রয়েছে তার এমআরপি প্রতিমাসে পরিবর্তিত হয় না।
তাই অপারেটর কর্তৃক অনুরোধ করা না হলে অটোগ্যাসের এমআরপি বছরে মাত্র একবার নির্ধারণ
করার জন্য বিইআরসিকে অনুরোধ করা হয়েছে।