দুই দলের একটা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ৬ বার। আর অন্য দলটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তো দূরের কথা, লিগই
জিততে পারেনি কখনো। এমন দুই দল লিভারপুল আর ভিয়ারিয়ালকে এক সুতোয় এনে গেঁথেছিল চলতি
মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল।
তবে লিভারপুল
মাঠের পারফর্ম্যান্সে ঠিকই নিজেদের আলাদা করে নিয়েছে, দুই গোলে হারিয়েছে স্প্যানিশ
দলটিকে। তাতে দুই মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলা থেকে খুব কাছে চলে
এসেছেন মোহামেদ সালাহরা।
দুই দলের ইতিহাস-ঐতিহ্যে
যেমন লিভারপুল এগিয়ে ছিল, মাঠের পারফর্ম্যান্সেও পরিষ্কার ছিল সেটা। শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত সাদিও মানে, মোহামেদ সালাহ, লুইস ডিয়াজ, ডিয়োগো জোটাদের আক্রমণই সামলেছে ভিয়ারিয়াল,
তাতে নিজেরা আক্রমণ গড়ার সুযোগই পায়নি কোচ উনাই এমেরির শিষ্যরা। তার একটা আঁচ পাওয়া
যায় পুরো ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখলে। পুরো ম্যাচে ২০টা শট করেছে লিভারপুল, যার পাঁচটা
ছিল লক্ষ্যে। আর ভিয়ারিয়াল পুরো ম্যাচে একটাই শট করেছে, তাও হয়েছে লক্ষ্যভ্রষ্ট।
ম্যাচের আগে ভিয়ারিয়াল
মিডফিল্ডার এতিয়েঁ কাপো বলেছিলেন, লিভারপুলের মাঠ অ্যানফিল্ড একটা নরকের মতো। যে দুই
কারণ জানিয়েছিলেন, তার দুটোই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল স্প্যানিশ দলটি। শুরু থেকেই লিভারপুল
সমর্থকদের দুয়োতে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল সফরকারীদের, সঙ্গে যোগ হয় লিভারপুলের পারফর্ম্যান্স।
কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের দল আক্রমণ শানিয়েছে শুরু থেকেই। তাতে গোলবারের নিচে ব্যস্ত সময়
কেটেছে ভিয়ারিয়ালের আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলির। প্রথম ৪৫ মিনিটে গোটা দুই
সেভ দিয়ে কাজটা ঠিকঠাক সেরেওছিলেন তিনি।
শুরুটা হয়েছিল
১৪ মিনিটে। বাম পাশ থেকে ডিয়াজ রক্ষণ ভেঙে ঢুকে পড়েছিলেন ভেতরে। এরপর তার শট ঠেকান
আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। ৩১ মিনিটে সেই ডিয়াজেরই আরেকটা শট রুখে ভিয়ারিয়ালকে সে যাত্রায়
রক্ষা করেন রুলি। প্রথমার্ধে দুর্ভাগ্যও সঙ্গী হয়েছিল লিভারপুলের। ২২ মিনিটে হেন্ডারসনের
হেডার, আর ৪১ মিনিটে থিয়াগো আলকান্তারার শট প্রতিহত হয়েছিল বারপোস্টে। ফলে প্রথমার্ধে
গোল পাওয়া হয়নি স্বাগতিকদের।
বিরতির পর ৫০
মিনিটে একবার ভিয়ারিয়াল জালে বল জড়িয়েছিল লিভারপুল। অফসাইডে কাটা পড়ে ফাবিনিওর সেই
চেষ্টা। তবে তিন মিনিট পর আর দুর্ভাগ্য পথ আগলে দাঁড়ায়নি লিভারপুলের। বরং কিছুটা ভাগ্যের
ছোঁয়াও ছিল গোলটায়। ডান প্রান্ত থেকে হেন্ডারসনের ক্রস পা ছুঁইয়ে ঠেকাতে চেয়েছিলেন
পারভিস এস্তুপিনিয়ান। তা তো পারেনইনি, উল্টো তার পা ছুঁয়ে বলটা দিক বদলে গোলরক্ষক রুলিকে
ধোঁকা দিয়ে জড়ায় জালে।
পরের গোলের জন্য
লিভারপুলকে অপেক্ষা করতে হয় মাত্র দুই মিনিট। মোহামেদ সালাহর বাড়ানো দারুণ এক বলে গোলরক্ষককে
একা পেয়ে যান সাদিও মানে। সেটা আলতো টোকায় জালে জড়ান সেনেগালিজ এই ফরোয়ার্ড। ২-০ গোলে
পিছিয়ে পড়ে ফেরার চেষ্টা করলেও ভিয়ারিয়ালের সে চেষ্টা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আগের
দুই রাউন্ডে যথাক্রমে জুভেন্তাস আর বায়ার্ন মিউনিখকে বিদায় করা ভিয়ারিয়াল তাই ম্যাচটা
শেষ করে হার নিয়েই।
আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে ১৫তম বারের মতো নকআউটের প্রথম লেগে জয় তুলে নেয় লিভারপুল। এর আগে ১৩ বারই এমন পরিস্থিতিতে পরের রাউন্ডে গিয়েছে অল রেডরা। শেষবার ব্যতিক্রম ঘটেছিল সেই ২০০১-০২ মৌসুমে। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম লেগে ১-০ গোলে হেরেও পরের লেগে ৪-২ গোলে জিতে দলটির বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল বেয়ার লেভারকুজেন। আগামী ৪ মে'র দ্বিতীয় লেগে ২০ বছর আগের সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যে ঠেকাতে চাইবে লিভারপুল, তা বলাই বাহুল্য।