প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষ কতটুকু
সেবা পেল। মানুষের জীবনমান কতটা সহজ হলো। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সব জায়গায়, সব
কিছুই যে লাভবান হবে সেটা না। কিন্তু লাভবান করা যায়। আমরা বিআরটিসিকেও যেমন লাভবান
করেছি, আজকে রেল যেটাকে অলাভজনক বলে বন্ধ করতে বলা হয়েছিল এবং বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি
সরকার, সেটা চালু করে আমরা এটা প্রমাণ করেছি যে রেলকেও লাভবান করা যেতে পারে এবং করা
যায়। রেলও আজকে লাভবান প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
বুধবার (২৭ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মুজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মিত
একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচ সংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমান রেল জাদুঘর
এবং সংগৃহীত ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ
কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের মানুষের
সেবা করাটাই হচ্ছে আমাদের কাজ। যে কারণে এক সময় (বিএনপি আমল) বলা হয়েছিল বিআরটিসি বন্ধ
করে দেওয়া হবে, কারণ এটা লাভজনক না। সরকারি প্রতিষ্ঠান কতটুকু লাভ করলো, কতটুকু লাভ
করলো না সেটার চেয়ে বড় কথা মানুষের সেবা কতটুকু দিতে পারলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে আরও সচল ও গতিশীল করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন,
‘আমরা দেশের জনগণের
সর্বত্র চলাচলের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে
আরো ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
‘এখানে লোকবল আরও ভালোভাবে দিতে
পারলে, লাইনগুলো আরও সম্প্রসারণ করতে পারলে এবং এই যে নতুন নতুন আমরা লাইন করছি এগুলো
চালু হয়ে গেলে আমি মনে করি এটা আরও লাভবান হবে। ’
বিএনপির আমলে রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,
‘সব থেকে বেশি
পণ্য পরিবহন করতে পারে রেল। আবার মানুষ যাতায়াতও করতে পারে রেলে অল্প খরচে। সেই রেলকেই
সব থেকে দুঃখের বিষয় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত
নেয়। মূলত আমাদের বিআরটিসি বন্ধ করার পরিকল্পনা, রেল বন্ধ করার পরিকল্পনা এসব পরামর্শ
দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ’
‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে ১০
হাজার কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। অনেক রেল লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেল আসলে
মুখ থুবড়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখন আমরা চেষ্টা করেছি এই রেলকে আবার নতুনভাবে
গড়ে তোলা এবং মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম করা।’
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন,
‘আমরা দেশকে এগিয়ে
নিয়ে যেতে চাই। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এটাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার জাতির
পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
কাজেই এই মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মাঝে মধ্যে বিপত্তি আসে। এটা হচ্ছে
দুঃখজনক। ’
বিগত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় রেলে অগ্নিসংযোগের কথা তুলে ধরে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমরা নতুন নতুন কোচ কিনলাম, নতুন লোকোমোটিভ
কিনলাম, ইঞ্জিন কিনলাম, সেই সময় বিএনপি শুরু করলো অগ্নিসন্ত্রাস। সব থেকে দুঃখজনক।’
‘যে নতুন রেলগুলো, যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে
সেই রেলে আগুন দেওয়া, আগুন দিয়ে রেল লাইন, রেল কোচ, রেল ইঞ্জিন বিএনপি পুড়িয়ে দিয়েছিল।
এটা নাকি তাদের আন্দোলন ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না মানুষকে
পুড়িয়ে মারা বা চলন্ত বাস, গাড়ি অথবা রেলে আগুন দিয়ে, লঞ্চে আগুন দিয়ে এটা কোনো ধরনের
আন্দোলন। এটা তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। অবশ্য তারা তো ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে
ক্ষমতায় বসে প্রতিষ্ঠিত পার্টি। জনগণের মধ্যে থেকে তো উঠে আসেনি। কাজেই জনগণের কল্যাণে
তাদের দৃষ্টি থাকে না। ক্ষমতার লোভটাই তাদের বড়। মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ
সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, এগুলোই তো তাদের কাজ ছিল। তারা তো দেশের মানুষের কল্যাণে
কিছু করেনি। ’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কমলাপুর প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী
নূরুল ইসলাম সুজন।