মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র
ঈদুল আজহা আগামীকাল বুধবার। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ। ইসলাম
ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব গত বছরের মতো এবারও অনেকটা ম্রিয়মান।
ঈদের আমেজ নেই বললেই চলে। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে স্বজন হারানোর বেদনা এবং আতংকের
আবহ বিরাজ করছে উৎসবে। গতবারের মতো এবারও একেবারে ভিন্ন মাত্রা ও আবহে পালিত হবে ঈদুল
আজহা। করোনার ঘাত প্রতিঘাতে ঈদ পালনের অনুষঙ্গগুলোতে ইতোমধ্যে নিদারুণ ছন্দপতন ঘটেছে।
কোরবানির পশুর বাজার থেকে শুরু করে ঈদের কেনাকাটা পর্যন্ত কোথাও উৎসব নেই।
এদিকে দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে
বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বাণীতে
দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীও
ঈদুল আযহা উপলক্ষে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বৈশ্বিক মহামারীর বিশেষ পরিস্থিতিতে
ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে কোনভাবেই যেন নিজের ও পরিবারের বিপদ ডেকে না আনেন সেজন্য
নগরবাসীর প্রতি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা মেনে ঈদ উদ্যাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি,
আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন
ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সমপ্রচার
করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত খাবার পরিবেশন
করা হবে। চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে। এখানে
সকাল ৭টায় প্রথম জামাত এবং সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নগরীর আন্দরকিল্লাহ
শাহী জামে মসজিদেও সকাল ৭টা ও ৮টায় দুইটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য
মসজিদগুলোতেও এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্তের উপর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাতসহ
নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ
এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.)
ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এর সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট
হয়ে নিজের অতি প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে নিয়ে
গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্র
ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন
তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে একটি দুম্বা (পশু) কোরবানি হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ
থেকে গায়েবিভাবে এই দুম্বা দেয়া হয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই পশু জবাইয়ের
মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য
পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।
সুরা হজ্জে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর (কোরবানির
পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’ আল্লাহর বান্দারা
কে কতটুকু ত্যাগ ও খোদাভীতির পরিচয় দিতে প্রস্তুত এবং আল্লাহপাকের নির্দেশ পালন করেন
তিনি তা-ই প্রত্যক্ষ করেন কেবল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে (মুসনাদে
আহমদ)। আল কোরআনের সুরা কাউসারে বলা হয়েছে, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার
উদ্দেশে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।’ সুরা হজ্জে আরো
বলা হয়েছে, ‘কোরবানি করার পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো এক দিন কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার বিধান আছে। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। এদিকে ৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তালবিয়াহ পাঠ করা ওয়াজিব। তালবিয়াহ হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’