Logo
শিরোনাম

মেয়েটাকে ভুত'ই মেরেছে

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৭ এপ্রিল ২০২১ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৪ নভেম্বর ২০২৩ | ৪১৯৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image
পরিবারের সবাই জানত ওই ছেলের সাথে এই মেয়ের সম্পর্ক আছে। এবং হয়ত এই সম্পর্কটা পরিবারের সবাই মেনে নিয়েছে। অন্য ব্যাখ্যা হতে পারে- কেউ কিছু জানত'ই না।

আমিনুল ইসলাম

মেয়েটিকে নিয়ে আমি কিছু লিখবো না। মেয়েটির বয়েস কম ছিল। কলেজে পড়ছিল। কতো হবে বয়েস?  ১৫-১৬? কিংবা সর্বোচ্চ ১৭? এর বেশি তো কোন ভাবেই নয়। এতটুকু মেয়ে ভুল করছিল না সঠিক কাজ করছিল; এই নিয়ে যারা লিখছেন; তাদের চিন্তার দৈন্যতা নিয়ে বরং আলোচনা হতে পারে।

দেশের নামকরা পত্রিকা গুলো পড়ে যা জানলাম, তাতে অবশ্য মনে হচ্ছে মেয়েটি মারা গিয়েছে কোন এক ভুতের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে! কেউ তাদের নাম বলছে না। পরিচয় প্রকাশ করছে না। এই হচ্ছে আমাদের নামকরা সংবাদ মাধ্যম গুলো দৌড়!

অবশ্য ভুতের বাবার যদি নিজের'ই দুই-চারটা পত্রিকার মালিকানা থাকে। দুই-চারটা টেলিভিশন চ্যানেল থাকে। বিরাট শপিং মল আর একটা আস্ত শহরের বিশাল অংশের জমির মালিকানা থাকে; তাহলে এমন দুই চারটা "মানুষ" মেরে ফেলা যায়। এতে কোন সমস্যা নেই।

তাছাড়া শুনেছি ভুত সমাজের নাকি মানুষ খেতে ভালো লাগে। মানুষের মাংসের স্বাদ নাকি একটু বেশি'ই!

তো, দেশের নামকরা পত্রিকা গুলো পড়ে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি- মেয়েটাকে ভুত'ই মেরেছে! তাই ভুতের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও তারা মেয়ের পরিবারের কে কোথায় থাকে। কে, কি করে এইসব হদিস'ই পেয়ে গিয়েছে। অবশ্য মেয়েটি তো মানুষ! কেবল ভুতের পরিচয় পাওয়া যায়নি! অবশ্য মানুষ হয়ে ভুতের পরিচয় পাওয়া কি আর এতো সহজ নাকি!

শেষমেশ নাম না জানা সাধারণ অন-লাইন পত্রিকা গুলো পড়ে জানতে পারলাম- ভুত না; বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ছেলের (সায়েম বোধকরি নাম) সাথে ওই মেয়ের সম্পর্ক ছিল।

মেয়েটার বাড়ি কুমিল্লায়। সে কলেজে পড়তে ঢাকা এসছিল। মাস তিনেক হয় গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে থাকতো। সেই ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসে লাখ টাকারও বেশি। ওই ফ্ল্যাটে মেয়েটা একা'ই থাকতো। আর ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল ওই মালিকের ছেলে। যে নিজেও বসুন্ধরা গ্রুপের একজন এমডি।  সে-ই ওই ফ্ল্যাটের ভাড়া দিত।

মৃত্যুর আগের দিন ওই মেয়ে তার বোনকে বলেছিল- সে বিপদে পরেছে। এরপর তার বোন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে দেখে তার বোনের মৃত দেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।

এখন নামকরা পত্রিকা গুলো লিখছে- এই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই মেয়ে যে আত্মহত্যা করেছে; আপনারা কি করে নিশ্চিত হলেন? অবশ্য ভুতের সাথে সম্পর্ক ছিল বলে কথা। ভুত সমাজ তো আবার চাইলে যে কাউকে উধাও করে দিতে পারে। ভুত ভলে কথা। একটা ফুঁ দিলেই উধাও!

এই পর্যন্ত লিখেই ভেবেছিলাম লেখাটা শেষ করবো।

আগেই বলেছি মেয়েটাকে নিয়ে আমি কিছু লিখবো না। অতটুকু মেয়ে ভুল করছিল নাকি ভালো করছিল; সেটা বুঝার হয়ত বয়েস'ই তার হয়নি। এই বয়েসে সবার কাছেই সব কিছু রঙিন মনে হয়। অতি সাধারণ জিনিসকেও মনে হয় বিশাল কিছু। আমরা সবাই এই বয়েস পার করে এসছি। সুতরাং এই বিষয় গুলো আমাদের জানা।

তাহলে আমরা কেন ভুল পথে যাইনি?

কারণ আমাদের পরিবারের সদস্যরা সব সময় আমাদের সঠিক পথ'টা দেখিয়ে দিতেন। বাবা-মা; বড় ভাই-বোনদের দায়িত্ব হচ্ছে- ছোটরা যদি কোন ভুল করে থাকে; কিংবা ভুল পথে যায়; তাহলে তাদেরকে সঠিক পথটা দেখিয়ে দেয়া।  এই মেয়েটা ঢাকা শহরে গুলশানের মতো একটা জায়গায় এতো বিশাল ফ্ল্যাটে থাকতো। যার ভাড়া'ই হচ্ছে এক লাখ টাকার উপর। আমি মোটামুটি নিশ্চিত- এক জীবনে আমার নিজের অন্তত এই সামর্থ্য হবে না।

তো, এই মেয়েটা এমন একটা অভিজাত এলাকায় এতো দামী একটা ফ্ল্যাটে থাকছিল; তার বড় বোন এবং পরিবারের অন্য সবাই সেটা জানত। এর দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। প্রথম ব্যাখ্যা হচ্ছে- পরিবারের সবাই জানত ওই ছেলের সাথে এই মেয়ের সম্পর্ক আছে। এবং হয়ত এই সম্পর্কটা পরিবারের সবাই মেনে নিয়েছে। অন্য ব্যাখ্যা হতে পারে- কেউ কিছু জানত'ই না।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটা গ্রহণযোগ্য হবার কথা নয়। কারণ মেয়েটা ওই ফ্ল্যাটে তিন মাসের মতো থাকছিল এবং তার বড় বোন অন্তত ওই বাসাটা চিনত।

ভালোবাসা জাত মানে না। ভালোবাসা শ্রেণী মানে না। ভালোবাসা কোন কিছুই মানে না। তাদের মাঝে যদি ভালোবাসার সম্পর্ক থেকে থাকে; তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু তাদের মাঝে যদি ভালোবাসার সম্পর্ক থেকে না থাকে; তাহলে মেয়েটা ভুল করছিল। সেই ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব ছিল পরিবারের বড়'দের।  এমনকি ভালোও যদি বেসে থাকে; এরপরও পরিবারের দায়িত্ব ছিল মেয়েটাকে সতর্ক করা। কারণ মেয়েটা পরিণত বয়েসের ছিল না।

ভুতের সাথে মানুষের সম্পর্ক হয় না।

ভুতের কাজ ভুত করেছে; মাঝখান থেকে মানুষটা হারিয়ে গিয়েছে। ভুতেদের বিচার হয় না। কারণ তারা অস্পৃশ্য। তাদের দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। তারা ইচ্ছে হলে মানুষের মাংস খায়। মাঝখান থেকে দোষ হয় ওই মানুষটার- কেন সে ভুতের সামনে হাজির হলো। তাই নিজেদেরই সতর্ক হতে হবে। সেই শিক্ষা পরিবারকেই দিতে হবে।


আরও খবর