জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন
চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর প্রভাব হবে সুদূর প্রসারী।
সামাজিক উন্নয়নেও এর বড় প্রভাব থাকবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের
মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফ লাইন রূপে কাজ করবে। বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ
এশিয়ায় সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক
উন্নয়নে অবদান রাখবে পদ্মা সেতু।
শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে
এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। সেমিনারটি আয়োজন করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক
উপ-কমিটি।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড.
মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে অংশ নেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম,
অর্থনীতিবিদ ড. এম খলিকুজ্জামান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান, পানি সম্পদ
ও জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর
ড. আইনুন নিশাত, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
ড. শিরীন বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাঙালির
আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।
এতো আকাঙ্ক্ষার এই সেতু আর স্বপ্ন নয়, এখন বাস্তব। এটি আমাদের অহংকার।’
স্পিকার আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণ প্রস্তাব দিতে সম্মত হয়, কিন্তু পরবর্তীতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র
এনে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। শুধু দুর্নীতির অনুমান করেই এই ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করা হয়। এই সেতু নিয়ে নানান ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে।
এই সব বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের
বহুমাত্রিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে শিল্প বিপ্লব
হবে। পদ্মার ওই পাড়ে এখন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেতুতে
রেল যোগাযোগ চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতায় সংযোগ সহজ হবে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়বে।’
স্পিকার আরও বলেন, ‘অন্যান্য অঞ্চলের
তুলনায় বরিশালে বর্তমানে ১০ ভাগ দরিদ্র বেশি। এটি কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে পদ্মা
সেতু। যোগাযোগ উন্নয়নের ফলে সেখানকার কৃষকরা তাদের ফসলে বাজারমূল্য পাবে। উৎপাদন বাড়বে।
এতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে তাদের।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতু কেবল
ইট-পাথরের তৈরি নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে আমাদের ভালোবাসা, গৌরব। শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নেই
এটা বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় এটি তিনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের
সদস্য পানি সম্পদ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর মান নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা হয়নি। আমি পদ্মা সেতুর নির্মাণ
কাজের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলাম, আমি বিষয়টা জানি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য
আরও বলেন, ‘যত ধরনের দুর্যোগ হতে পারে, আমরা সব মাথায় রেখেই সেতু
নির্মাণ করেছি। পদ্মার মতো নদীতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে। কত জোরে আঘাত হানতে পারে, সেগুলো
মোকাবিলা করবার মতো সক্ষমতা তৈরি করেই আমরা সেতু নির্মাণ করেছি। পদ্মা অত্যন্ত শক্তিশালী
একটি নদী। যখন এর প্রশস্ততা কমে, তখন গভীরতা বাড়ে। মাওয়া এলাকায় এসে নদীর প্রশস্ততা
যেমন কমেছে, তেমনই গভীরতাও বেড়েছে। নদীর ধর্ম বুঝে, তারপর ব্যবস্থা নিতে হবে।’