এই শতাব্দীতে
ভেজাল প্রায় সবেতেই, ভেজালের প্রকোপ থেকে বাদ নেই আপনার সাজের জিনিসও। সাজের জিনিসে
ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় হাজার রকমের টক্সিক এলিমেন্ট যা ক্ষতি করে আপনার ত্বকের।
চর্মরোগ তো বটেই, ত্বকের ক্যান্সারেও এখন এ সবের ভূমিকা বিশাল। ন্যাচারাল প্রোডাক্টের
আজ আর দেখাই নেই বাজারে, বরং যত রকম কৃত্রিম ক্ষতিকর জিনিস বাজারে অছে সবই ব্যবহৃত
হয় সাজের জিনিসে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ঝুঁকছেন বাড়িতে তৈরি ন্যাচারাল প্রোডাক্টের
দিকে। মাস্কারাও তেমনই একটি প্রসাধনী যা আপনি বাড়িতে বসেই বানাতে পারবেন। অত্যন্ত
অল্পকিছু জিনিস যা বাড়িতেই থাকে তা দিয়েই বানানো যায় এটি। নিচে তেমনই কিছু পদ্ধতির
কথা বলা হল।
নারকেল তেল,
জোজাবা তেলের মাস্কারা: এ ক্ষেত্রে যে যে উপকরণগুলো লাগছে তা হল, নারকেল তেল, ভিটামিন
ই তেল, শিয়া মাখন, মৌমোম, জোজোবা তেল, দুটি বা তিনটি অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের ক্যাপসুল
আর দুটি পাত্র। প্রথম চারটি উপকরণ আপনাকে একটি ছোট পাত্রে নিতে হবে সমপরিমাণে। প্রতিটাই
অর্ধেক চা চামচ করে নিন। এবার একটি বড় পাত্রে অল্প পানি ঢেলে সেটি আগুনে বসান। এরপর
ওই পানিতে বসিয়ে দিন ছোট বাটিটি। এতে ছোট বাটির মিশ্রণটি গলে ভালো করে মিশে যাবে।
এবারে মিশ্রণে দিন অ্যাক্টিভেটেড চারকোল যা মিশ্রণকে ঘন কালো করবে। সবশেষে মিশ্রণটিতে
দিন জোজোবা তেল। তারপর ঠাণ্ডা করে ঢেলে নিন একটি বোতলে। বোতলে ঢালতে ব্যবহার করুন
ফানেল।
অ্যালোভেরার
মাস্কারা: এই ক্ষেত্রে সবকিছুই আগের মতোই লাগে শুধু জোজোবা তেলের বদলে ব্যবহার করতে
হবে অ্যালোভেরা জেল আর শিয়া মাখনের এখানে কোনও কাজ নেই। অ্যালোভেরা জেল বাজারে কিনতে
পাওয়া যায় কিন্তু তাতে অনেক সময় প্রিজারভেটিভ মেশানো হয়ে থাকে। তাই প্রিজারভেটিভ
ছাড়া অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে হলে বেছে নিন অ্যালোভেরার গাছ থেকে নিঃসৃত অ্যালোভেরা
জেল যা একেবারেই বিশুদ্ধ। এবারে আগের মতোই সমপরিমাণ অর্থাৎ অর্ধেক চা চামচ নারকেল তেল,
মৌমোম, ভিটামিন ই তেল তিনটি মিশিয়ে নিন ছোটপাত্রে। বড় পাত্রে পানি ঢেলে তাতে বসিয়ে
গরম করে নিন যাতে মিশ্রণ গলে যায়। এবারে এতে মিশিয়ে দিন সমপরিমাণ অ্যালোভেরা জেল
ও দুটি অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের ক্যাপসুল। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ভরে নিন একটি বোতলে।
ল্যাভেন্ডার
তেলের মাস্কারা: অনেকেই ল্যাভেন্ডার তেলের গন্ধ বেশ পছন্দ করেন তাই বিভিন্ন ন্যাচারাল
প্রোডাক্ট যখন বাড়িতে তৈরি করা হয় তাতে মিশিয়ে দেওয়া হয় ল্যাভেন্ডার তেল। মাস্কারার
ক্ষেত্রেও অ্যালোভেরা জেল এর বদলে দেওয়া যায় ল্যাভেন্ডার তেল। এটির ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয়
হল নারকেল তেল, মৌমোম আর ভিটামিন ই তেল। এই তিনটিকে একই পদ্ধতিতে একই পরিমাণে নিয়ে
মেশাতে হবে। এরপর বড় পাত্রের জলে রেখে তাপ দিয়ে তাতে দিন অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের
ক্যাপসুল। মিশ্রণটি কালো হল আগুন নিভিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেলে নিন বোতলে। এতে মিশিয়ে দিন
ল্যাভেন্ডার তেল, পরিমাণ অর্ধেক চা চামচ।
মাস্কারা তৈরি
আসলে এতটাই সহজ। কিন্তু এটা তৈরি করতে কিছু জিনিসে নজর রাখা জরুরি। প্রথমত অনেকেরই
ত্বকে চারকোল বাজে প্রভাব ফেলে। ফলে সে ক্ষেত্রে চারকোল ব্যবহার না করে ব্যবহার করতে
পারেন মাইকা পাউডার যার কাজ একই রকম। কালোর বদলে অন্য রঙের মাস্কারা তৈরি করতে যদি
মন চায় তবে চারকোল বাদ দিয়ে বেছে নিন বেন্টোনাইট মাটি। মুলতানি মাটি একরটম বেন্টোনাইট
মাটি। এছাড়া দুই তিন রঙের বেন্টোনাইট মাটি বাজারে বা যে কোনও অনলাইন স্টোরে মেলে যা
মাস্কারা তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। শেষে বলা দরকার, মাস্কারা যে বোতলে ঢালবেন সেটা
আগে গরম পানিতে স্টেরিলাইজ করে নিন। যাতে কোনও জীবাণু না থাকে। ব্যস, মাস্কারা তৈরি
আর একেবারেই কঠিন নয়, আপনার বাড়িতেই এবার তৈরি হবে নামী ব্র্যান্ডের মত মাস্কারা,
দোকান থেকে আর কেনার প্রয়োজন পড়বে না।