মানুষ মাত্রই
দুর্বল আর সে ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় এ ভুলের অনেক বড় মাশুল দিতে হয়। অনেক
ভুলের সংশোধন নেই। যার ফলে অনেকে জীবনভর এর মূল্য দিতে থাকে। আধ্যাত্মিক জগতের অবস্থাও
অনুরূপ।
মানুষ যেহেতু
ভুল করে তাই সে দুর্বল। কিন্তু পৃথিবীতে ক’জন আছে, যে নিজেকে দুর্বল বলে স্বীকার করে?
তার ভুলের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চায়? খুব কম লোকই এমন রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন-
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِينَ
আর হে আমার জাতি!
তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতপর (তাওবা করে) তাঁরই প্রতি
মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির
উপর শক্তি বাড়িয়ে দেবেন। তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।' (সুরা হুদ : আয়াত
৫২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা
আল্লাহর কাছে তাওবা কর এবং গোণাহর জন্য ক্ষমা চাও, আমি এক দিনে একশত বার তাওবাহ করি।’
(মুসলিম)
ইসলাম মানুষকে
সর্বদা উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীত করতে চেয়েছে। তাই ইসলাম মানুষকে ওই সব নির্দেশ দিয়েছে
যা তাকে উচ্চ আসনে সমাসীন করাতে পারে। পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তাআলা তাওবাহ
করতে বলেছেন। নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছেন। আধ্যাত্মিক জীবনে তাওবাহ বা ক্ষমা
চাওয়া ব্যতিত উন্নতি করা সম্ভব নয়।
পাপ থেকে নিজেকে
রক্ষার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। অশ্লীলতা ও চারিত্রিক অসৎ কামনা-বাসনা
মুক্ত থাকতে হাদিনের নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। হাদিসে এসেছে-
হজরত যিয়াদ ইবনে
ইলাক্বাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল
আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ!
নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা তথা মন্দ
কামনা-বাসনা থেকে পানাহ চাই।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা
কুরআনে পাকে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের
প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। এর ফলে তিনি তোমাদের
ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদেরকে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন।
তোমাদের জন্যে উদ্যানরাজি স্থাপন করবেন এবং তোমাদের উপকারার্থে নদী বইয়ে দেবেন।’ (সুরা
নূহ: আয়াত ১০-১২)
এক কথায় ক্ষমা
চাওয়া একটি ফলদায়ক বৃক্ষ। আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাওয়া শুধু গোনাহগারের জন্যই নয়
বরং সবার ক্ষমা চাওয়া উচিত। বলতে গেলে ইসতেগফার বা ক্ষমা না চাওয়া অহংকারের লক্ষণ।
আর অহংকার এমন একটি পাপ যা মানুষকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে নসিহত করেছেন, হে আমার উম্মত! তোমরা ইসতেগফার কর। আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চাও। তোমরা আমাকে দেখ। আমিও দিনে সত্তর বার আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করি। এখানে সত্তর অর্থ সত্তর নয় বরং অগণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লামের মত নিষ্পাপ ব্যক্তি এবং আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্যপ্রাপ্ত সত্তা যদি
দিনে অগণিতবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে থাকেন তবে আমাদের অবস্থা কী হওয়া উচিত। আমরা
তো পাপে নিমজ্জিত।
প্রতি নিয়তই পাপ
কাজ করে যাচ্ছি। তাহলে আমাদের তো সর্বদাই ইসতেগফার নিয়োজিত থাকা দরকার। আসলে ইসতেগফার
মানুষকে বিনয়ী করে তুলে। মানুষকে অহংকারী থেকে মুক্ত করে।
তাই আসুন! আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নির্দেশানুযায়ী আমাদের ভুল-ত্রুটির
জন্য দৈনিক ইসতেগফার করি এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির অধিকারী হই।
আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন আমাদের সবাইকে নিজেদের পাপের জন্য বেশি বেশি তাওবাহ ও ইসতেগফার করার তাওফিক
দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ক্ষমার দৃষ্টিতে সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করে নিন।
আমিন।