একদিকে প্রায়
আড়াই বছর ধরে ফিফা র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম আর অন্যদিকে
ইউরো কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। তাই শেষ ষোলোতেই ছিল জমজমাট লড়াইয়ের আভাস।
মাঠের খেলায় মিললও তুমুল উত্তেজনা। যেখানে শেষ হাসি হাসল বর্তমান নাম্বার ওয়ান বেলজিয়াম।
থরগান হ্যাজার্ডের
করা একমাত্র গোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে ইউরো কাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায়
করে দিল বেলজিয়াম। ম্যাচের ৪২ মিনিটে থরগানের জাদুকরী গোলটিই হয়ে রইল বেলজিয়াম শেষ
আটে ওঠার চাবি। প্রাণপন চেষ্টার পরেও তা শোধ করতে পারেনি পর্তুগাল।
প্রায় ৩২ বছর
পর মুখোমুখি লড়াইয়ে বেলজিয়ামের কাছে হারল পর্তুগাল। তাতেই ঘটল সর্বনাশ। গ্রুপপর্বের
তিন ম্যাচে মাত্র এক জয় নিয়ে কোনোমতে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লেখালেও, সেখান থেকে আর পরবর্তী
ধাপে যেতে পারলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো-ব্রুনো ফার্নান্দেসরা।
এবারের কোপায়
চার ম্যাচ খেলে মাত্র একটি ম্যাচই জিতেছে পর্তুগাল। যা তাদের ইউরো কাপের ইতিহাসে এক
আসরে সর্বনিম্ন পরাজয়ের রেকর্ড। এর আগে ১৯৮৪ সালে চার ম্যাচ খেলে এক জয় নিয়েই বিদায়
নিতে হয়েছিল প্রথমবারের মতো ইউরো খেলতে নামা পর্তুগিজদের।
এমন নয় যে পুরো
ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে পাত্তাই পায়নি পর্তুগাল। বরং এর বিপরীতটা বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
বিশেষ করে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক আক্রমণে বেলজিয়ামের রক্ষণভাগের নাভিশ্বাস
তুলেছেন ব্রুনো ফার্নান্দেস, আন্দ্রেস সিলভারা। কিন্তু মেলেনি সোনার হরিণ গোলের দেখা।
অন্যদিকে মেজর
টুর্নামেন্টে (ইউরো/বিশ্বকাপ) এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টানা পাঁচ ম্যাচ জেতার রেকর্ড
গড়ল বেলজিয়াম। সবমিলিয়ে মেজর টুর্নামেন্টে শেষ ১১ ম্যাচের মধ্যে দশটিতেই জিতেছে রবার্তো
মার্টিনেজের দল। যার সুবাদে পৌঁছে গেল চলতি ইউরো কাপের কোয়ার্টারের ফাইনালে।
ম্যাচ জেতানো
গোলটি এসেছে প্রথমার্ধের বিরতির বাঁশি বাজার তিন মিনিট আগে। সাজানো আক্রমণে ওপরে উঠে
যায় বেলজিয়াম। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে কেভিন ডি ব্রুইনকে পাস দেন রোমেলু লুকাকু।
সেই বল ধরে থমাস মিউনারকে দেন ডি ব্রুইন।
সেখান থেকে বল
পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেয়া শটে পর্তুগালের গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিওকে পরাস্ত
করেন তারকা ফরোয়ার্ড এডেন হ্যাজার্ডের ভাই থরগান হ্যাজার্ড। ইউরো কাপের তৃতীয় ম্যাচ
খেলতে নেমে দ্বিতীয় গোল করলেন থরগান। পরে এটিই হয়ে যায় ম্যাচের গোল্ডেন গোল।
প্রথমার্ধের বিরতিতে
যাওয়ার আগে লিড নিলেও, পর্তুগালের চেয়ে ভালো খেলেছে বেলজিয়াম- এমনটা বলার সুযোগ ছিল
না। কেননা ম্যাচের শুরু থেকেই সমানে সমান লড়েছেন রোনালদো-ব্রুনোরা। বিশেষ করে ম্যাচের
২৫ মিনিটের সময় ফ্রি-কিকে সম্ভাবনা জাগান রোনালদো। তবে তা ঠেকিয়ে দেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক
থিবো কর্তোয়া।
ম্যাচের প্রথমার্ধের
শেষ দিকে গোড়ালিতে গুরুতর ফাউলের শিকার হন বেলজিয়ামের প্রাণভোমরা কেভিন ডি ব্রুইন।
তবু তাকে নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করেছিলেন দলের কোচ মার্টিনেজ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের
তিন মিনিটের বেশি মাঠে থাকতে পারেননি ডি ব্রুইন। চোটের তীব্রতার কারণে তাকে উঠিয়ে নিতে
বাধ্য হন বেলজিয়াম কোচ।
ডি ব্রুইন মাঠ
ছাড়ার পর যেন আর নিজেদের খুঁজেই পায়নি বেলজিয়াম। দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময়টায় একের পর
এক আক্রমণ করেই গেছে পর্তুগাল। বেলজিয়ামের কাজ তখন ছিল শুধুই আক্রমণ প্রতিহত করা। বেশ
কিছু পাল্টা আক্রমণে গোলের সুযোগ পেলেও, তা কাজে লাগাতে পারেননি লুকাকু-এডেনরা।
সারা ম্যাচে অন্তত
২৩ বার গোলের উদ্দেশ্যে শট নিয়েছে পর্তুগাল। যার মধ্যে লক্ষ্য বরাবর ছিল ৬টি শট। কিন্তু
একটিতেও মেলেনি গোল। ম্যাচের ৮৩ মিনিটের সময় রাফায়েল গুররেইরোর শট ডানপাশের পোস্টে
লেগে প্রতিহত হলে, তখনই যেন লেখা হয়ে যায় পর্তুগালের বিদায়।