সাকিব আল হাসান আর নুরুল হাসান সোহান দলকে
আশা দেখিয়েছিলেন। কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ইনিংস পরাজয় এড়িয়েছেন। লিডও এনে দিয়েছেন।
তবে একটু আফসোস তো রয়েই গেলো। তাদের জুটিটা আরেকটু বড় হলে ক্যারিবীয়দের উল্টো চাপে
ফেলা যেতো!
সাকিব-সোহানের ১২৩ রানের লড়াকু জুটিতে
ভর করেই ইনিংস হারের শঙ্কায় থাকা ম্যাচে ৮৩ রানের লিড নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে
৯০.৫ ওভার খেলে অলআউট হয়েছে ২৪৫ রানে । অর্থাৎ জিততে হলে ৮৪ রান করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
প্রথম ইনিংসেই স্বাগতিকদের থেকে ১৬২ রানে
পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১০৯ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। এমন জায়গা থেকে
ঘুরে দাঁড়াতে পারবে টাইগাররা, ভাবা কঠিনই ছিল। কিন্তু সাকিব আর সোহান আশা ছাড়লেন না।
লাঞ্চ বিরতির আগে হাল ধরলেন। তখন যোগ হয়েছিল মাত্র ৬ রান।
বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনে চোখ ধাঁধানো
ব্যাটিং করেছেন এই যুগল। এই সেশনে বাংলাদেশ ইনিংস হার এড়িয়ে লিড নিয়েছে। একটি উইকেটও
না হারিয়ে ২৭ ওভারে তোলে ৯৫ রান। ৬ উইকেটে ২১০ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের চা-বিরতিতে যায়
বাংলাদেশ।
সাকিব আর সোহানের লড়াকু এই জুটিতেই ছিল
বাংলাদেশের সব আশা-ভরসা। দলের স্বীকৃত ব্যাটারদের শেষ জুটি যে এটিই। অবশেষে শতরানের
জুটিটি ভেঙেছেন ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ। ২৩১ বলে গড়া জুটিটি ছিল ১২৩ রানের। এটিই
চলতি টেস্টে দুুই দলের সেরা জুটি।
সাকিব-সোহানের প্রতিরোধে ঘাম ঝরা ওয়েস্ট
ইন্ডিজ নতুন বল নিয়ে সাফল্য পেয়েছে। সাকিব শেষতক ধৈর্য হারিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ধরা
পড়েছেন শর্ট এক্সট্রা কভারে।
অধিনায়কের ক্যাচ নিয়েছেন আরেক অধিনায়ক।
ব্রেথওয়েটের ক্যাচ হওয়ার আগে সাকিব করেন ৬৩ রান। ৯৯ বলের ইনিংসে ৯টি বাউন্ডারি হাঁকান
টাইগার দলপতি। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফসেঞ্চুরি।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সোহানও।
তিন ওভার পরই তিনি আউট হয়েছেন। এই উইকেটও নিয়েছেন রোচ। তাকে পয়েন্টে খেলতে গিয়ে এজ
হয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হয়েছেন সোহান। ১৪৭ বলে গড়া তার ৬৪ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি চারের
মার। তারপর লেজটা গুড়িয়ে দিতে সময় লাগেনি ক্যারিবীয়দের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে
সফল কেমার রোচ। ৫৩ রানে ৫টি উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৩টি উইকেট আলজেরি জোসেফের।
দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল
২ উইকেটে ৫০ রান। আগের দিন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল ও প্রমোশন পেয়ে ওপরে ওঠা মেহেদি
হাসান মিরাজের উইকেট হারায় সফরকারীরা। ১১২ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শুরু করে বাংলাদেশ।
এর আগে মেহেদি মিরাজের চার উইকেটের সঙ্গে
খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেনদের জোড়া শিকারে ক্যারিবীয়দের ২৬৫ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ।
তবে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় স্বাগতিকরা পেয়ে যায় ১৬২ রানের বড় লিড।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইতিবাচক
শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। একপ্রান্তে রয়েসয়ে খেলেন জয়,
তামিম ছিলেন স্বপ্রতিভ। কিন্তু দশম ওভারে আক্রমণে এসেই তামিমকে ফিরিয়ে দেন আলজারি জোসেফ।
উইকেটের পেছনে ক্যাচ হওয়ার আগে চারটি চারের
মারে ৩১ বলে ২২ রান করেন তামিম। তিন নম্বরে নাইটাওয়াচম্যান হিসেবে নামানো হয় মেহেদি
মিরাজকে। নিজের পরের ওভারে এ ডানহাতি অলরাউন্ডারকেও ফিরিয়ে দেন জোসেফ। আউট হওয়ার আগে
মাত্র ২ রান করতে পেরেছেন মিরাজ।
এরপর দিনের শেষভাগের প্রায় আধঘণ্টা সময়
নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিয়েছেন মাহমুদুল জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এ দুজনের অবিচ্ছিন্ন
৫০ বলের জুটিতে আসে ১৫ রান। জয় ১৮ ও শান্ত ৮ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করেন।
তৃতীয় দিনের সকালটাও দেখেশুনে শুরু করেছিলেন
মাহমুদুল হাসান জয় আর নাজমুল হাসান শান্ত। প্রথম আধ ঘণ্টা কাটিয়েও দিয়েছিল এই জুটি।
কিন্তু এরপরই ভুল করে বসেন শান্ত।
কাইল মায়ার্সের বাউন্সি ডেলিভারিতে ব্যাট
ছুঁইয়ে দিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ হন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ৪৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে
তিনি করেন ১৭ রান। প্রথম ইনিংসে কেমার রোচের বলে শান্ত বোল্ড হয়েছিলেন, আরও একবার দৃষ্টিকটু
আউট হলেন।
এরপর দ্রুতই ফিরেছেন মুমিনুল হক। নেতৃত্বের
চাপে ভেঙে পড়ছেন, এমনটা ভেবেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটার টানা ৯ ইনিংস
দশের নিচে আউট হয়েছেন।
এবার মুমিনুল সাজঘরে ফিরেছেন ৪ রানে। কাইল
মায়ার্সের ডেলিভারি প্যাডে লাগলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। মুমিনুল রিভিউ নিয়েছিলেন।
কিন্তু লেগ স্ট্যাম্প অল্প একটু পেয়ে যাওয়ায় আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয়েছে বাঁহাতি এই
ব্যাটারকে। প্রথম ইনিংসে তিনি করেছিলেন শূন্য।
ফর্মে থাকা লিটন দাসের ওপর বড় আশা ছিল
টাইগার সমর্থকদের। মাহমুদুল জয়ের সঙ্গে ২৫ রানের একটি জুটিও গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু
শেষ পর্যন্ত বাকিদের মতো বাজে শট খেলেই আউট হয়েছেন।
ব্যক্তিগত ১৭ রানে সাজঘরের পথ ধরেন ডানহাতি
এই ব্যাটার। কেমার রোচের শরীরের অনেক বাইরে থাকা ডেলিভারি অযথা শট খেলতে গিয়ে দ্বিতীয়
স্লিপে ক্যাচ হন লিটন।
অভিজ্ঞ ব্যাটাররা একের পর এক ফিরে যাচ্ছেন
সাজঘরে। কিন্তু তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় ধৈর্যর পরিচয় দিয়ে যাচ্ছিলেন। একদম টেস্ট মেজাজেই
খেলছিলেন টাইগার ওপেনার। হাফসেঞ্চুরিটা তার প্রাপ্যই ছিল।
কিন্তু চল্লিশের ঘরে গিয়ে ভুল করে বসেন
২১ বছর বয়সী এই তরুণ। কেমার রোচের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে শট খেলতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটরক্ষকের
হাতে ধরা পড়েন জয়। ১৫৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে তার ৪২ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটির সমাপ্তি তাতেই।