অনেকেই আক্ষেপ করেন, আগের মতো ইলিশ মাছের স্বাদ ও গন্ধ নেই। ভোজন বিলাসী বাঙালির এই অভিযোগ অমূলক নয়। ইলিশ মাছ যেনো আগের মতো রসনা মেটাতে পারছে না। এর কারণ কিন্তু মানুষই। নদী তথা প্রাকৃতিক দূষণের কারণে ইলিশ মাছ হারিয়েছে তার জৌলুস।
অন্যদিকে নদীতে এখন ইলিশ মাছের আকাল যাচ্ছে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, লাগামছাড়া দূষণের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ সংকটে। জেলেরা মেঘনা নদীতে দিনের পর দিন জাল ফেলে বসে থাকলেও মিলছে না কাঙ্খিত রূপালী শস্য।
মেঘনায় বেড়েছে দূষণ। দূষণ জেনো লাগাম ছাড়া। নদীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে লঞ্চ, জাহাজ। ড্রেজিং, দূষণের জন্য বিপদে মেঘনার ইলিশ। এই নদীতে ইলিশ প্রজনন সম্প্রতি ব্যাপকভাবে কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। শুধু তাই নয়, স্বাদ হারাচ্ছে ইলিশ, জানা যাচ্ছে এমনটাই।
মেঘনায় ইলিশ কমে যাচ্ছে, এই নিয়ে দীর্ঘদিনের উৎকণ্ঠা। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, সারাদিন তারা জাল ফেললেও কোনও ইলিশ পাচ্ছেন না। মেঘনার পানিতে দেদারসে ফেলা হচ্ছে পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক। এর ফলে পানির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে মাছের স্বাদও বদলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীতে দূষণ বাড়ায় ইলিশ বা অন্যান্য মাছের বাসস্থানের উপর প্রভাব পড়েছে। তারা যেদিকে যেতে চাইছে যেতে পারছে না। তাদের গতি বদলাতে হচ্ছে। এর ফলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ তার স্বাদ হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদীকেন্দ্র, চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ইলিশের পেটে ৩৬ শতাংশ কাদা-বালি পাওয়া যাচ্ছে। কারণ নদীতে বালি এবং কাদার পরিমাণ বেশি। এই মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে ইলিশের গঠন, স্বাদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
চাঁদপুর নদীকেন্দ্রে কর্মরত এক কর্মকর্তার ভাষ্য, আগে ইলিশের যে স্বাদ পাওয়া যেত এখন আর যাচ্ছে না কারণ দূষণের কারণে ইলিশের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু মেঘনা নয়, অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করলে অন্যান্য নদীতেও পড়বে প্রভাব-এমনটাই আশংকা করছেন নদী ও মৎস্য গবেষকরা। অন্যদিকে, বালি উত্তোলনের একটি বড় প্রভাব চাঁদপুরে ইলিশ প্রজননের উপর পড়ছে।
হারুনর রশিদ অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠিও দেন। অবিলম্বে এই ড্রেজিং বন্ধ না করলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইলিশের উৎপাদন, স্বাদেও আসতে পারে ব্যপক পরিবর্তন, এই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।