নেত্রকোনায় নদ
নদীসহ হাওরাঞ্চলে ফের পানি বিপদসীমার ১১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খালিয়াজুরীর
ধনু নদের পানি বিপদসীমার ৫০ সেমি নিচে থেকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বাড়তে শুরু করে।
ভারতের চেরাপুঞ্জিতে
মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধনু নদের খালিয়াজুরী
পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগাম পূর্বাভাসের কারণে হাওরের
জমিগুলো থেকে ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসন,
কৃষি বিভাগ ও পাউবো পৃথকভাবে বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা
ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার
৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হাওরে অর্ধেক জমি রয়েছে। প্রথম দফায় গত
২ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি
৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমায় পৌঁছে যায়।
পানির প্রবল চাপে
খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধগুলোতে পানির চাপ বেড়ে যায়।
৩ ও ৪ এপ্রিল মদনের খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা হাওর, ফতেপুর হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওরসহ কয়েকটি
হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান
পানিতে নিমজ্জিত হয়।
এ ছাড়া লেপসাই
হাওর, চৈতারা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থানে ভেঙে যাওয়ার
ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাঁধের অনেক অংশে ধস ও ফাটল দেখা দেয়। পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন কৃষকদের
নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো সংস্কারকাজ করা হয়। এ জন্য নেত্রকোনায় এখন পর্যন্ত কোনো
বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি।
গত বৃহস্পতিবার
থেকে বৃষ্টিপাতসহ উজান থেকে নেমে আসা পানি নতুন করে বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে এ আশঙ্কায়
কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে শুরু করে হাওর পাড়ের চাষিরা।
খালিয়াজুরী সদরের
অনিমেশ চন্দ্র সরকার ও কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম মোড়ল বলেন, আগাম বন্যার ভয়ে
কিছুটা কম পাকা ধান কাটা হচ্ছে। এ কারণে ধানের উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে ধানের ন্যায্যমূল্য
না থাকায় খরচের হিসাবের সাথে উৎপাদন খরচ মিলছে না।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, নেত্রকোনার হাওরে বাঁধগুলো রক্ষায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জেলায় নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ১৪৫টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। নতুন করে আরও ১১০টি হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরে প্রায় ৫৮ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।