পঞ্চাষোর্ধরা প্রায়ই পায়ের জয়েন্টের ব্যথা
বা পা ফোলার অভিযোগ করে থাকেন। এর সঙ্গে পা লাল হয়ে যাওয়া বা এর সঙ্গে ত্বকে কালো স্পট
হয়। কখনো পায়ের ঘা বা ক্ষত সহজে না শুকানো ও পায়ের শিরা নীলও হয়ে যায়। এমন হলে আমরা
এটিকে শুধু পায়ের সমস্যা বলে মনে করি এবং বয়স্কদের জন্য এটি স্বাভাবিক বলে ধরে নেই।
তবে অল্প বয়সেও কিন্তু এমন সমস্যা হতে পারে।
পঞ্চাষোর্ধরা প্রায়ই পায়ের জয়েন্টের ব্যথা
বা পা ফোলার অভিযোগ করে থাকেন। এর সঙ্গে পা লাল হয়ে যাওয়া বা এর সঙ্গে ত্বকে কালো স্পট
হয়। কখনো পায়ের ঘা বা ক্ষত সহজে না শুকানো ও পায়ের শিরা নীলও হয়ে যায়। এমন হলে আমরা
এটিকে শুধু পায়ের সমস্যা বলে মনে করি এবং বয়স্কদের জন্য এটি স্বাভাবিক বলে ধরে নেই।
তবে অল্প বয়সেও কিন্তু এমন সমস্যা হতে পারে।
পায়ের স্বাস্থ্যের শত্রু কারা
প্রধান শত্রু হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাঁটা
বা ব্যায়াম না করা। যারা দীর্ঘক্ষণ ও দীর্ঘদিন ধরে চেয়ার বা পিড়িতে বসে কাজ করেন তাদের
জীবনের কোনো এক সময় ওপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যারা স্থূলকায় বা যাদের দীর্ঘদিনের
অনিয়ন্ত্রিত রক্তের সুগার আছে তাদের এ সমস্যা পাশাপাশি পায়ে জ্বালা-পোড়া বা বিদ্যুৎ
চমকানোর মতো উপসর্গ প্রকাশ পায়। পায়ের স্বাস্থ্যের আরেকটি ঝুঁকি উপাদান হচ্ছে যারা
ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন করেন। আমাদের মতো দেশে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগেও এ সমস্যা হয়।
পায়ের সুস্বাস্থ্য কী প্রয়োজন
ধমনির মাধ্যমে হার্ট থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ
বিশুদ্ধ রক্ত পায়ে প্রবাহিত হয় বলে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারি এবং পায়ের যে কোনো
ক্ষত বা ঘা হওয়া থেকে দূরে থাকি। এ ধমনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে অনিয়ন্ত্রিত রক্তের সুগার
ও ধূমপান।
পক্ষান্তরে দূষিত রক্ত শিরা দিয়ে পা থেকে
ফুসফুসে যায়। এ রক্ত ঠিকমতো প্রবাহিত হলে পা ফোলে না বা পায়ে লাল বা কালো স্পট তৈরি
হয় না। শুয়ে-বসে থাকা বা পর্যাপ্ত পরিমাণে হাঁটাচলা বা ব্যায়াম না করলে এবং শারীরিক
ওজন বেশি হলে এ শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লসিকা নালি থেকে রস যা লিম্ফ নামে পরিচিত
তা পা থেকে হার্টে যায়। কোনো কারণে এ নালি ব্লক হয়ে গেলে পা ফুলে যায়। শুরুতেই এর চিকিৎসা
না করালে পা ফুলে যায়। পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্যান্সার এবং এক ধরনের মশার কারণেও এ লসিকা
নালি ব্লক হয়ে যেতে পারে। পায়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখেত এ ধমনি, শিরা ও লসিকা নালির
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন ভাসকুলার বা রক্তনালির সার্জন পায়ের এসব সমস্যা বুঝতেও
চিকিৎসা দক্ষতা রাখে।
করণীয়
* প্রতিদিন দু’ঘণ্টা হাঁটা ও
ওজন সুনিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে।
* সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে প্রতিদিন ২-৩
ঘণ্টা থাকবেন।
* দীর্ঘসময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন
না।
* সাঁতার কাটা ও সাইক্লিং পায়ের স্বাস্থ্যের
জন্য ভালো।
* পান, জর্দা, জাফরানি, গুল, ধূমপান থেকে
বিরত থাকবেন।
* ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণে রাখবেন এবং এ
রোগীরা তাদের পায়ের যত্ন নেবেন।
* ডায়াবেটিস রোগীরা পায়ের যে কোনো আঘাত
থেকে সতর্ক থাকবেন।
* নরম জুতা মোজাসহ পরিধান করবেন, স্যান্ডেল,
স্লিপার পরা থেকে বিরত থাকবেন, ঘরে বা বাইরে খালি পায়ে হাঁটবেন না।
* মশা যেন পায়ে না কামড়ায় সেদিকে সতর্ক
থাকবেন। এক্ষেত্রে মশা নাশক স্প্রে বা মশারি ব্যবহার করবেন। এর মাধ্যমে ফাইলেরিয়া রোগ
হবে না।
সমস্যা হলে কোথায় যাবেন
পায়ের ত্বকে কালো স্পট, ঘা, নীলচে শিরা
কিংবা পা ফুলে গেলে অবিলম্বে একজন ভাসকুলার সার্জন বা রক্তনালি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেবেন। তিনি প্রয়োজনে পায়ের কালার ডপলার, এনজিওগ্রাম, ভেনোগ্রাফি, লিম্ফেনজিওগ্রাফি
এবং ভেনটিলেশন পারফিউশন স্ক্যান করবেন।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ভাসকুলার
ও কাডিওথোরাসিক বিভাগ, অ্যাপোলো হাসপাতাল, নিউ দিল্লি।