Logo
শিরোনাম

পিরোজপুরে ‘ক্রিস্টাল মেথ আইসের’ ব্যবসার মুল হোতা কারা?

প্রকাশিত:সোমবার ১৯ জুলাই ২০২১ | হালনাগাদ:রবিবার ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ৮২৮০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image
সরকার দলীয় ইউনিয়ন পর্যায় ও পৌর নেতা হওয়া সুবাদে বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রকার মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল আলোচিত এই ‘কাউয়া রাজ’ । প্রভাবশালী নেতাদের কারণে স্থানীয় প্রশাসনও ছিল আতংকে

পিরোজপুর শহর জুড়ে চলছে আলোচিত ও মূল্যবান মাদক ক্রিস্টাল মেথ আইস  উদ্ধার ও এ ঘটনার সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতা মোহাম্মদ মাসুম খান রাজ ওরফে কাউয়া রাজ এর আটকের বিষয়। আর র‌্যাবের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাউয়া রাজএই মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকা পিরোজপুরের প্রভাবশালী অন্তত চারজন নেতা সহ বেশ কয়েকজন আলোচিত রাজনৈতিক নেতার নাম জানিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের ওধনকাঠী গ্রামের মৃত মতিউর রহমান খানের ছেলে  মোহাম্মদ মাসুম খান রাজ ওরফে কাউয়া রাজ’  পিরোজপুরের পাঁচপাড়া এলাকার চিহ্ণিত এক মাদক ব্যবসায়ী, পিরোজপুর পৌর শহরের মাছিমপুর এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী, পিরোজপুর পৌর শহরের পশ্চিম শিকারপুর এলাকার আর এক মাদক ব্যবসায়ীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে মাদক ব্যবসা করে আসছিল।

সূত্র জানায়, পিরোজপুরের পাঁচপাড়া এলাকার চিহ্ণিত ওই মাদক ব্যবসায়ী ঢাকা-খুলনা এবং যশোর এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে নানা প্রকার মাদক সমগ্রী পিরোজপুরে নিয়ে আসতো। গ্রেপ্তারকৃত কাউয়া রাজ ও ওই মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কিছু উঠতি বয়সের বখাটে তরুণ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ সব মাদক সামগ্রী বিক্রি করতো।

পাঁচপাড়া এলাকার সূত্রে আরো জানাযায়, উল্লেখিত মাদক চক্রটি বিভিন্ন সময়ে পাঁচপাড়া বাজারে বখাটেদের আড্ডা বসিয়ে প্রকাশে মাদক বিক্রি করে আসছে। কাউয়া রাজ গ্রেপ্তার হলেও তার প্রধান সহযোগীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় পিরোজপুর মাদক ব্যবসা চলমান থাকবে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

সরকার দলীয় ইউনিয়ন পর্যায় ও পৌর নেতা হওয়া সুবাদে বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রকার মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল আলোচিত এই কাউয়া রাজ। প্রভাবশালী নেতাদের কারণে স্থানীয় প্রশাসনও ছিল আতংকে। ফলে কাউয়া রাজকে কেউ গ্রেপ্তার বা আটক করতে সক্ষম হয় নি। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে তাকে সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের ওধনকাঠী গ্রামের বাড়ি থেকে মাদক বিক্রির সময় আটক করে।

র‌্যাবের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে কাউয়া রাজযেসব রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী নেতাদের নাম উল্লেখ করছে তারাই মূলত শহরের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে তদন্ত স্বার্থে এখনই ওই নেতাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি ওই সূত্র। তবে ওই নেতাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদক ব্যবসায়ী কাউয়া রাজ  পিরোজপুর জেলা সদরের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের ওধনকাঠী গ্রামের মৃত মতিউর রহমান খানের ছেলে। রবিবার (১৮ জুলাই) র‌্যাব-৮ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পরে ওই দিন দুপুরে তাকে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় বরিশাল র‌্যাব-৮ এর ডিএডি মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার বাদী হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

উল্লেখ্য গত শনিবার (১৭ জুলাই) রাত পৌনে ৯টার দিকে জেলার সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের ওধনকাঠী গ্রামের আটককৃত মাসুম খানের বাড়ির সামনের ইটের রাস্তার উপর বসে মাদক জাতীয় দ্রব্য বেচা-কেনা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালান। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে থাকা অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলেও মাসুম খান দৌড়ে পালানোর সময় আটক হয়। এ সময় তার কাছে থাকা একশত গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস নামের দামীয় মাদক উদ্ধার করা হয়।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম শিকদার মন্টু গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ মাসুম খান রাজ ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিশ্চিত করেছেন। তবে ওই কমিটি এখনো অনুমোদিত হয় নি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) একাধীক সূত্র জানান, আটককৃত মোঃ মাসুম খান রাজ একজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে মাদকসহ তার ভাই মামুন ও তার স্ত্রীসহ গ্রেফতার করা হয়েছিলো।

পিরোজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.জ.ম মাসুদুজ্জামান জানান, ওই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাকে থানার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মাদক অত্যন্ত দামি। যার একশ গ্রামের দাম ১৫ লক্ষ টাকা। জেলা শহরে এই মাদক ঢুকে পড়েছে সত্যিই দুঃখজনক।


আরও খবর